গাজা ও লেবাননের অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির এ হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত ৭৪ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে গাজায় নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। এছাড়া এ সময়ে লেবাননে নিহত হয়েছেন আরও অন্তত ২১ জন।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে উত্তর গাজায় অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। এলাকাটিতে ইসরায়েলি সেনারা অভিযান জোরদার ও গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে আরও দুজন সংবাদিক রয়েছেন। এ নিয়ে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ যুদ্ধে মোট ১৮২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নিয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪২ হাজার ৯২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার ৭৬৫ জন শিশু রয়েছেন। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন আরও প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজায় এক লাখ ৮৩৩ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া অধিকৃত পশ্চিত তীরে আরও ছয় হাজার ২৫০ জন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় লেবাননের অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন।
রোববার (২৭ অক্টোবর) মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ নিয়ে লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় মোট ২ হাজার ৬৭২ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া এ সময়ে মোট আহত হয়েছেন অন্তত ১২ হাজার ৪৬৮ জন।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছর ধরে অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে। জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিশরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে
গাজাভিত্তিক জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘অবকাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে, তা পাগলামির পর্যায়ে পড়ে... দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ভবনও নেই যেখানে ইসরায়েল হামলা চালায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত অর্থেই এ অঞ্চলের ভৌগোলিক চিত্র পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যেখানে আগে পাহাড় ছিল না, এখন সেখানে পাহাড় হয়ে গেছে। দুই হাজার পাউন্ডের বোমাগুলো আক্ষরিক অর্থেই এ অঞ্চলের মানচিত্র বদলে দিয়েছে।’
মন্তব্য করুন