গাজার যোদ্ধাদের সংগঠন হামাসের নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। গত বুধবার (১৬ অক্টোবর) ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন। তার মরদেহের কাছ থেকে পাসপোর্টসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি জানান, সিনওয়ারের কাছ থেকে নগদ ৪০ হাজার শেকেল, অস্ত্র এবং নিরাপত্তা ভেস্ট উদ্ধার করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল-১২ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিনওয়ারের কাছে আরও কিছু অদ্ভুত কিছু জিনিস পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে পাসপোর্ট, আল-আকসা মসজিদের ছবি সংবলিত দুটি বই, হাত ঘড়ি, নেইল কাটার, তজবিহ, মেন্টস চকলেট, একটি গুলি, আতর, স্কচটেপ এবং টুথপেস্ট রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিনওয়ারের কাছে পাওয়া পাসপোর্টটি তার নিজের নয়। এটি আরেক ব্যক্তির। ওই ব্যক্তি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার হয়ে কাজ করতেন। এ পাসপোর্ট সিনওয়ার কেন বহন করছিলেন সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সিনওয়ারের মৃত্যুর পর ইসরায়েলি বাহিনী জানায়, প্রথমে তারা সিনওয়ারকে শনাক্ত করতে পারেননি। হামলার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ইসরায়েলি বাহিনী সেই ভবনে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা অবাক হন। কারণ, তিনজনের একজন অবিকল সিনওয়ারের মতো দেখতে। শেষমেশ ডিএনএ ও দাঁত পরীক্ষায় ইসরায়েলি বাহিনী নিশ্চিত হন যে নিহত ব্যক্তি হামাস নেতা সিনওয়ার।
এদিকে হামাস নেতার মৃত্যুতে সংগঠনটির নেতৃত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার একজন নেতা, একজন বীরযোদ্ধা, যিনি ছিলেন অবৈধ দখলদারদের জন্য একটি মূর্তিমান আতঙ্ক। অসংখ্যবার যাকে হত্যার চেষ্টা করেছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। ২০১৭ সাল থেকেই তাকে বলা হচ্ছিল ইসরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড পার্সন।
আইডিএফ জানিয়েছে, তাদের ৮২৮তম বিসলামাক ব্রিগেডের একটি দল বুধবার (১৬ অক্টোবর) রাফার তাল আল-সুলতান এলাকায় টহল দিচ্ছিল। সেখানে একটি ভবনে তিন সশস্ত্র ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয় এবং তারা ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। তখনো সেনারা জানতেন না তারা কত বড় সাফল্য অর্জন করেছেন।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেনারা সে ভবনে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা অবাক হন। কারণ, তিনজনের একজন অবিকল সিনওয়ারের মতো দেখতে। শেষমেশ ডিএনএ ও দাঁত পরীক্ষায় সেনাদের ধারণা সত্য প্রমাণিত হয়।
ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে নিহত হওয়ার সময় সিনওয়ারের সঙ্গে কোনো ইসরায়েলি বন্দি ছিল না, যাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠে আসছিল সিনওয়ারের বিরুদ্ধে। এমনকি গাজার এই যোদ্ধা কোনো টানেলে লুকিয়েও ছিলেন না। বরং তিনি সশস্ত্র সহযোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করতে করতে নিহত হয়েছেন।
আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানান, তারা জানতেন না সিনওয়ার সেখানে ছিলেন। তবে তারা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা তিনজনকে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে পালাতে দেখে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালান। সিনওয়ার একা একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন এবং ড্রোনের মাধ্যমে তাকে শনাক্ত করে হত্যা করা হয়।
হামাসের পলিটব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ নিহতের পর তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন সিনওয়ার। স্থানীয়ভাবে আবু ইব্রাহিম নামেও পরিচিত সিনওয়ার। তিনি ১৯৬২ সালে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে জন্মগ্রহণ করেন। তার বয়স যখন ১৯ তখন ইসলামী আন্দোলনের জন্য প্রথমবার ইসরায়েল তাকে গ্রেপ্তার করে।
কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে ২৫ বছর বয়সে ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি হামাসের নিরাপত্তা শাখা আল মাজদ প্রতিষ্ঠা করেন। এই শাখার সদস্যরা তথাকথিত নৈতিকতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্তদের এবং ইসরায়েলের সাথে সহযোগিতা করার জন্য সন্দেহভাজনদের ওপর দমন-পীড়ন, নির্যাতন চালায়।
১৯৮৮ সালে তাকে ইসরায়েলি বাহিনী আবারও গ্রেপ্তার করে। বিচারে সিনওয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দণ্ডিত হন। কিন্তু ২০১১ সালে গাজায় হামাসের হাতে বন্দি থাকা একজন ইসরায়েলি সৈনিকের বিনিময়ে মুক্তি পান ১ হাজার ২৭ ফিলিস্তিনি বন্দি। তাদের মধ্যে তিনিও ছিলেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলার পরিকল্পনাকারী ছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার; আইডিএফ এমনটিই বিশ্বাস করে। এর প্রমাণ হিসেবে তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। বলা হয়, তিনিই ছিলেন সেই হামলার মাস্টারমাইন্ড।
মন্তব্য করুন