লেবাননে অব্যাহতভাবে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির রাজধানী বৈরুতসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা হামলা চালিয়েছে। এতে ২৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৫০ জন।
বুধবার (০৯ অক্টোবর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন করে রাজধানী বৈরুতসহ পূর্বাঞ্চলের বেক্কা ভ্যালিতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় লেবাননে এক হাজার ৪০০-এর মতো লোক নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সামরিক, বেসামরিক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরাও রয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অভিযানের কারণে লেবাননের ১২ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছেন। এ জনসংখ্যা লেবাননের মোট জনসংখ্যার চারভাগের প্রায় এক ভাগ। উত্তেজনা বাড়ার পর থেকে গত তিন সপ্তাহ ধরে তারা বাস্তুচ্যুত রয়েছেন।
অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৪১ হাজার ৯৬৫ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৯৭ হাজার ৫৯০ জন।
এদিকে লেবাননের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, লেবাননকে ‘গাজার মতো’ ধ্বংসের মুখোমুখি করা হতে পারে। এছাড়া হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ ও তার সম্ভাব্য স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তিকে ইসরায়েল হত্যা করেছে বলেও দাবি করেন তিনি। হিজবুল্লাহর ডেপুটি লিডার নাইম কাসেম বলেন, তাদের ক্ষমতা ও কমান্ড কাঠামো এখনো অক্ষত রয়েছে। তারা ইসরায়েলের বন্দর শহর হাইফাতে ব্যাপক রকেট হামলা চালিয়েছে।
এদিকে বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মধ্যপ্রাচ্য। গত এক বছরে বিশ্বে অনেক বিপদের মুহূর্ত এসেছে। তবে এবারেরটি সবচেয়ে ভয়াবহ। গত সাত দিনের মধ্যে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন। লেবাননে স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। ইরান প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইসরায়েলে। তেহরানে পাল্টা হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে তেলআবিব।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো উত্তেজনা কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দ্রুত সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর পক্ষ থেকে সব পক্ষকে ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে মধ্যপ্রাচ্য সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। গত এক সপ্তাহে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার কারণে মূলত এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যায় লেবাননের বৈরুতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইসরায়েল বোমা হামলা চালায়। সেখানে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। অনেক আবাসিক ভবন ধসে পড়ে। মাটিতে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। আকাশ ধুলাবালি ও ধোঁয়ায় ভরে ওঠে। পুরো লেবানন থেকে ওই দৃশ্য দেখা যায়। এ হামলা হয় মাটির নিচে থাকা হিজবুল্লাহর বাংকার লক্ষ্য করে। এ হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। ইসরায়েলের এক সপ্তাহ ধরে চালানো হামলায় ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর নাসরুল্লাহর মৃত্যুর খবর আসে।
তারও এক সপ্তাহ আগে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে লক্ষ্য করে পর পর অসংখ্য ওয়াকি-টকি এবং পেজার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে কমপক্ষে ৩২ জন নিহত এবং তিন হাজার জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল।
মন্তব্য করুন