গাজায় ইসরায়েলি হামলার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। গতকাল ৭ আক্টোবর এ হামলার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। যুদ্ধের বর্ষপূর্তির পর জিম্মিদের নিয়ে বার্তা দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস।
মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবার) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গাজায় যুদ্ধের বর্ষপূতি উপলক্ষে দেওয়া এক বার্তায় হামাসের সামরিক মুখপাত্র আবু উবায়দা জানান, ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের চলমান যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। এ সময় তিনি গাজায় থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের নিয়েও কথা বলেন।
তিনি বলেন, যখন জিম্মিদের কথা আসে– আমি দখলদারদের এবং জিম্মিদের পরিবারকে বলতে চাই, আপনারা এক বছর আগে সমস্ত জিম্মিকে জীবিত মুক্ত করতে পারতেন। কিন্তু নেতানিয়াহুর উচ্চাকাঙ্ক্ষা সবসময় জিম্মিদের বিরুদ্ধে এবং জিম্মিদের পরিবারের বিরুদ্ধে ছিল।
হামাসের এ মুখপাত্র বলেন, আমরা প্রথম দিন থেকেই জিম্মিদের নিরাপদ স্থানে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ আমরা আমাদের ধর্মের নিয়ম এবং মানবতার নিয়ম মেনে চলি। বন্দি বিনিময়ের জন্য আমরা তাদের নিরাপদ স্থানে রেখেছি। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ২৫০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে গাজায় বন্দি করে নিয়ে আসে হামাস। একই দিন হামাসকে নির্মূল এবং বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। গত নভেম্বরে সাতদিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিনিময়ে ১১০ ইসরায়েলি বন্দিকে হামাস মুক্তি দিলেও এখনো তাদের হাতে শতাধিক বন্দি আছেন।
অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪১ হাজার ৯০৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৯৭ হাজার ৩০৩ জন।
গত এক বছর ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েল অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটির এ হামলায় গাজা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যা পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এ জন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে।
জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিসরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে
গাজাভিত্তিক জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা গত সপ্তাহে গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘অবকাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে, তা পাগলামির পর্যায়ে পড়ে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ভবনও নেই যেখানে ইসরায়েল হামলা চালায়নি।’
মন্তব্য করুন