কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বিবিসির বিশ্লেষণ

সর্বাত্মক যুদ্ধের কিনারায় মধ্যপ্রাচ্য

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মধ্যপ্রাচ্য। গত এক বছরে বিশ্বে অনেক বিপদের মুহূর্ত এসেছে। তবে এবারেরটি সব চেয়ে ভয়াবহ। গত সাত দিনের মধ্যে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ খুন হয়েছেন। লেবাননে স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। ইরান প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইসরায়েলে। তেহরানে পাল্টা হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে তেল আবিব।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো উত্তেজনা কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দ্রুত সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭–এর পক্ষ থেকে সব পক্ষকে ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে মধ্যপ্রাচ্য সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। গত এক সপ্তাহে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার কারণে মূলত এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা: নাসরুল্লাহকে হত্যা লেবাননের বৈরুতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইসরায়েল বোমা হামলা চালায়। সেখানে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। অনেক আবাসিক ভবন ধসে পড়ে। মাটিতে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। আকাশ ধুলাবালি ও ধোঁয়ায় ভরে ওঠে। পুরো লেবানন থেকে ওই দৃশ্য দেখা যায়। এ হামলা হয় মাটির নিচে থাকা হিজবুল্লাহর বাংকার লক্ষ্য করে। এ হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। ইসরায়েলের এক সপ্তাহ ধরে চালানো হামলায় ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর নাসরুল্লাহর মৃত্যুর খবর আসে।

হাসান নাসরাল্লাহ ইসরায়েলের হাতে খুন হতে পারেন এমন আশঙ্কায় বহু বছর ধরে জনসমক্ষে আসেননি। তাই তাকে নিশানা করে হত্যার এই ঘটনাকে ‘প্রাইজ টার্গেট’ বলা হচ্ছে। নাসরাল্লাহকে হত্যার পরও হেজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালাতে থাকে ইসরায়েল। এক সপ্তাহ জুড়ে চলতে থাকা লাগাতার হামলায় ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

তারও এক সপ্তাহ আগে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে লক্ষ্য করে পর পর অসংখ্য ওয়াকি-টকি এবং পেজার বিস্ফোরণ ঘটনো হয়। এতে কমপক্ষে ৩২ জন নিহত এবং তিন হাজার জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল।

নাসরাল্লাহর মৃত্যু ওই অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনের সমস্ত আশা ও সম্ভাবনা নিশ্চিহ্ন করে দেয়, যা হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেও সম্ভব বলে মনে হয়েছিল। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে হামলার পর কূটনৈতিকভাবে এই সমস্যা সমাধানের যেটুকু আশা ভরসা ছিল সেটাও ম্লান হয়ে পড়ে।

সোমবার রাত: লেবাননে ঢুকে পড়ে ইসরায়েল নাসরুল্লাহকে হত্যার তিন দিন যেতে না যেতেই ইসরায়েলি সেনারা লেবাননের সীমান্ত অতিক্রম করে হামলা শুরু করেন। একে তারা প্রথমে সীমিত আকারে স্থল অভিযান হিসেবে ঘোষণা দেয়। তারা দাবি করে, হিজবুল্লাহর রকেট ও ড্রোন হামলা বন্ধে তারা এ অভিযান চালাচ্ছে।

বর্তমানে ইসরায়েলি সেনারা একই সঙ্গে দুই স্থানে স্থল হামলা করছে। এর মধ্যে আগে থেকেই গাজায় হামলা চালিয়ে আসছিল। নতুন করে এবার লেবাননে হামলা শুরু হলো। কয়েক দশকের মধ্যে এমন ঘটনা আর ঘটেনি। এর আগে সর্বশেষ ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াই করেছিল ইসরায়েল; কিন্তু ওই লড়াইয়ে কোনো মীমাংসা হয়নি। জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে হিজবুল্লাহ। এরপর ইরানের সমর্থনে হিজবুল্লাহ আরও শক্তি সঞ্চয় করে।

গাজা থেকে হামাসকে পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলেও লেবানন থেকে হিজবুল্লাহকে সরানো নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল। এর পরিবর্তে তারা সীমিত লক্ষ্যবস্তুতে হামলার কথা বলেছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা: ইসরায়েলে ইরানের হামলা লেবাননে ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরুর পরের দিনই স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটার দিকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইরান। ইরান ইসরায়েলে প্রায় ২০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এ অবস্থায় এক কোটি ইসরায়েলিকে বোমা থেকে বাঁচানোর জন্য সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আশ্রয়কেন্দ্রে দ্রুত পাঠানো হয়।

ইরানের সবচেয়ে বড় প্রক্সি গ্রুপ হিসেবে পরিচিত হিজবুল্লাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় প্রতিরোধ হিসেবে ইরানকে কিছু করে দেখাতে হতো। এ উদ্দেশ্য থেকেই হামলা চালায় তেহরান। এর আগে গত এপ্রিল মাসেও ইসরায়েলে ৩০০ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছিল ইরান। তবে এবারের হামলা ছিল আগের চেয়েও শক্তিশালী।

এবার আগেভাগে তথ্য জানায়নি ইরান। এ ছাড়া দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। তবে হামলার বিষয়টি ক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাই এটি সর্বাত্মক লড়াইয়ের জন্য ইরানের আকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে না। ইরান জানে, সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে তারা কুলিয়ে উঠতে পারবে না। ইসরায়েলের পাশে রয়েছে পশ্চিমা মিত্ররা। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ পশ্চিমাদের সমর্থন দেবে। এতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র তারা ভূপাতিত করতে সক্ষম হবে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি গত শুক্রবার অনমনীয় থাকার কথা বলেছেন। তবে ইরান জানে, তারা উত্তেজনা বেশি দূর এগিয়ে নিতে পারবে না।

এরপর কী? হিজবুল্লাহর অনেক ক্ষতি সত্ত্বেও তারা লেবাননে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিহাস বলে, লেবাননে ইসরায়েলের জন্য ঢোকা সহজ; কিন্তু বেরিয়ে আসা কঠিন।

এদিকে ইরানের হামলার জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু কীভাবে এর জবাব দেবেন, সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক ও তেল স্থাপনাগুলোয় হামলা নিরুৎসাহিত করেছেন তিনি। তবে ইসরায়েল বলেছে, তারা এসব স্থানে হামলা হবে না এমন কোনো নিশ্চয়তা দিচ্ছে না।

ইরান নিয়ে যেকোনো সময় প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে ইসরায়েল। তবে নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক মন্তব্যে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ইরানের শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছেন। ইসরায়েলের অন্য নেতারা বলছেন, তারা বহুমুখী যুদ্ধ জড়িয়ে গেছেন। নেতানিয়াহু বলছেন, তারা সাতটি স্থানে যুদ্ধ চালাচ্ছেন। এগুলো হলো গাজা, লেবানন, পশ্চিম তীর, ইয়েমেন, ইরান, ইরাক ও সিরিয়া।

ইসরায়েলের জন্য এটা সত্য যে সব দিক থেকেই তাদের ওপর হামলা আসছে। তবে ইরাক ও সিরিয়া থেকে আসা ইরানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হুমকি এখনো ততটা মারাত্মক নয়।

এখনই হয়তো কোনও সর্বাত্মক আঞ্চলিক যুদ্ধ দেখা যাবে না, কিন্তু অনেক অংশীদাররা মনে করে যে তাদের কিছু করার রয়েছে। ফলে গাজা যুদ্ধ এখন বেশ নাটকীয়তার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য অনেক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজে চাকরির সুযোগ

ঘরে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ, পাশে ছিল শাবল ও চিরকুট

কাদের-নানক-হারুনের তথ্য পেলেই গ্রেপ্তার : র‍্যাব

‘ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন আছে তবে প্রচলিত কালচার পরিবর্তন করতে হবে’

৭ অক্টোবর সামনে রেখে / গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার মানুষের মিছিল

রাজশাহীর সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান গ্রেপ্তার

সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ ২০২৪ উদ্বোধন / দেশের ক্রান্তিলগ্নে সেনাবাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে

জানি বাধা আসবে, তবু থামব না কোনো দিন: সোহানা সাবা

দেশে স্বৈরাচারের দোসরদের কোনো স্থান হবে না : রিজভী

আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সুযোগ নেই : দুদু

১০

শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব ৭ দিনের রিমান্ডে

১১

ডিসি নিয়োগে দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে দুদকে আবেদন

১২

জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইরানে হামলার ঘোষণা দিলেন নেতানিয়াহু

১৩

গুহা থেকে উত্তাপ ছড়ালেন জেফার

১৪

দেশে ফিরলেন টুকু

১৫

সাকিববিহীন টি-টোয়েন্টি একাদশ কেমন হতে পারে?

১৬

স্থগিত হবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা?

১৭

গণতন্ত্রের চর্চাকে সামনে রেখে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিত : রিজভী

১৮

দেশে বন্যার পাঁচ কারণ জানালেন পরিবেশ উপদেষ্টা

১৯

‘সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ ২০২৪’ উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা

২০
X