‘জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের এ কবিতার লাইনগুলো এখন যেন ইরানের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। দেশটিকে দমন করার জন্য প্রেসিডেন্ট থেকে বিজ্ঞানী, প্রক্সিযোদ্ধা প্রধান থেকে শীর্ষ জেনারেদের একের পর এক হত্যা করেছে ইসরায়েল। তবুও মাত্র ছয় মাসের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো দেশটির অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী দেশ ইরান।
গেল মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) তেল আবিবে চালানো এই হামলার মাস্টামাইন ছিলেন ইরানের একজন শীর্ষ জেনারেল। তার নাম আমির আলি হাজিজাদেহ। এই জেনারেল ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নতুন আতঙ্কের নাম। তাকে দ্বিতীয় কাসেম সোলাইমানি বলেও ডাকা হয়।
হাজিজাদেহ এর নেতৃত্বে ইসরায়েলের কমার্শিয়াল শিপে হামলা চালানোর পাশাপাশি ক্রমাগত ইরানি ড্রোনের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইরানের সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলের ৩টি বিমান ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘাঁটিগুলো হলো, মোসাদের একটি বিমান ঘাঁটি, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সংরক্ষণের মূল ঘাঁটি নেভাতিম এবং নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত হাতজেরিম বিমান ঘাঁটি। ঘাঁটিগুলোর পাশাপাশি এই অভিযানে ইসরাইলের কৌশলগত রাডার স্থাপনা এবং গাজা উপত্যকার কাছে মোতায়েন করা ট্যাংক এবং সাঁজোয়া যানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে ইরাকে হত্যা করে মার্কিন বাহিনী। তেহরানের জন্য এটি অপূরণীয় ক্ষতি মনে করা হতো। কিন্তু পারস্য সভ্যতার অদম্য এক মানসিকতা আছে। তারই ফল যেন জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহের উত্থান। কাসেম সোলাইমানির শূন্যতা পূরণ করে দিয়েছেন তিনি। ইরানের প্রতিপক্ষরা এই ‘নতুন সোলাইমানি’কে নিয়ে হিসেব মিলাতে পারছে না।
ইসরায়েল স্বীকার করেছে, তাদের ওপর ড্রোন ও মিসাইল হামলার মূল মাস্টারমাইন্ড আমির আলি হাজিজাদেহ। শুধু তাই নয়,ইসরাইলের নিরাপত্তা কর্মকর্তা, বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকরদের ধারণা, আমির আলি হাজিজাদেহ কাসেম সোলাইমানির স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
সোলাইমানির চেয়ে বয়সে পাঁচ বছরের ছোট আমির আলি হাজিজাদেহ্। কিন্তু ইতোমধ্যে আপন প্রতিভায় সোলাইমানির মতো স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ইরানিদের। আর ভয় দেখাচ্ছেন দেশটির প্রতিপক্ষদের। সোলাইমানির সঙ্গে তার অনেক মিল রয়েছে। ইরানের যুদ্ধকৌশলকে আত্মরক্ষামূলক না রেখে আক্রমণাত্মক রাখতে চান তিনিও। তবে ভিন্ন পদ্ধতিতে, ভিন্ন ধাঁচে। ইতোমধ্যে ইরানের বাইরে দেশে-বিদেশে তার জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। সাহসী সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই জেনারেল হাজিজাদেহ কাশেম সোলাইমানির চেয়েও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন