ক্রমাগত সামরিক ও গোয়েন্দা ব্যর্থতায় নাকাল ইরান। নাকের ডগায় বসে তেহরানের মিত্রদের ওপর হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। আবার খোদ ইরানে ঢুকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করেছে তেল আবিব। ওই ঘটনায় প্রতিশোধের হুমকি দিলেও কিছুই করতে পারেনি ইরান। উল্টো ইসরায়েলি হামলায় বিপর্যস্ত মিত্র দেশ লেবানন।
এমন কিছু ঘটতে পারে তা কল্পনাতেও হয়তো ভাবতে পারেনি ইরান। লেবাননে ঢুকে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। ওই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কেবল মৌখিক প্রতিবাদ আর হুমকি দিয়ে দায় সেরেছে তেহরান। অথচ ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, নাসরুল্লাহকে হত্যার পর ইরানি নেতৃত্বের মাঝে বিভাজন দেখা দিয়েছে।
ইরানের কী করা উচিত তা নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। চারজন ইরানি কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। ইরানের রক্ষণশীলরা চাইছে কড়া জবাব দিক তেহরান। তবে মধ্যপন্থি রয়ে-সয়ে দেখতে চাইছে কী ঘটে। নজিরবিহীন ওই হামলার পর শনিবারই (২৮ সেপ্টেম্বর) খামেনিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বন্ধু নাসরুল্লাহকে হত্যার পর তড়িঘড়ি উচ্চ পর্যায়ের জরুরি বৈঠক করেন খামেনি। কিন্তু বৈঠকেই মতভেদ দেখা দেয়। কট্টরপন্থি হিসেবে পরিচিত সাইদ জলিলি, ইসরায়েল যেন হামলা চালাতে সাহস না পায়, তাই আগে ইরানের হামলা করা উচিত বলে মত দেন। কিন্তু ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বসেন।
ইরানি প্রেসিডেন্টের বিশ্বাস, এমনটা করলে ইসরায়েলের ফাঁদে পা দেবে তেহরান। কেননা, ইসরায়েলের আলটিমেট লক্ষ্য আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু করা। ইরানের মধ্যপন্থি শঙ্কা, ইসরায়েলে হামলা চালালে তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় টার্গেট করতে পারে তেল আবিব। এতে দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে ধুঁকতে থাকা ইরানকে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে।
নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর প্রকাশ্য ভাষণে খামেনি তার প্রশংসার পাশাপাশি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু তিনি ইসরায়েলে হামলার মতো কোনো ঘোষণা দেননি। বরং প্রতিরোধ যোদ্ধারা জবাব দিলে কেবল তখনই ইরান সমর্থন দেবে বলে ইঙ্গিত দিযেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। বিশ্লেষকরা বলছেন, সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়াতেই এমন নমনীয় আচরণ দেখিয়েছেন খামেনি।
মন্তব্য করুন