হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার পর এ নিয়ে কথা বলেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার ভাষণ ছিল দম্ভে ভরা। সে সঙ্গে আগামী দিনে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য চরম হুমকির বার্তাও তার ভাষণে উচ্চারিত হয়।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, হাসান নাসরুল্লাহ ছিলেন ইরানের 'অশুভ অক্ষের' মূল চালিকাশক্তি। তিনি এবং তার অনুসারীরা ইসরায়েলকে ধ্বংস করে দেওয়ার যে পরিকল্পনা তার মূল স্থপতি। শুধু ইরানের নির্দেশে কাজ করতেন না, বরং তিনি প্রায়ই নিজেও ইরানকে প্রভাবিত করতেন। তাই সপ্তাহের শুরুতেই আমি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি- সম্প্রতি আইডিএফ হিজবুল্লাহর উপর যে হামলা চালাচ্ছে, তাদের নিমূলে এগুলো পর্যাপ্ত নয়।
নাসরাল্লাহকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য অপরিহার্য। উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদে বাড়ি ফিরিয়ে আনা এবং বছরের পর বছর ধরে এই অঞ্চলের ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তনের জন্য এর বিকল্প ছিল না। কারণ, নাসরাল্লাহ বেঁচে থাকলে, হিজবুল্লাহর যে সক্ষমতা আমরা ধ্বংস করে দিয়েছে, শিগগিরই তা পুনর্গঠন করতেন। তাই আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম— আর এখন নাসরাল্লাহ বেঁচে নেই। তার নির্মূল আমাদের বাসিন্দাদের বাড়ি ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে। এ ছাড়াও, আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের বন্দিদের মুক্তির পথ আরও সহজ করবে।
গাজার ইয়াহিয়া সিনওয়ার যত দ্রুত বুঝতে পারবেন যে নাসরুল্লাহ আর তাকে সাহায্য করতে পারবে না, তত দ্রুত আমাদের জিম্মিদের মুক্তির সম্ভাবনা বাড়বে। আমি আইডিএফ, বিমান বাহিনী, আইডিএফ ইন্টেলিজেন্স, মোসাদ এবং আইএসএ-কে ধন্যবাদ জানাতে চাই তাদের অসাধারণ সাফল্যের জন্য, এবং শুধু নাসরুল্লাহকে হত্যার জন্য জন্য নয়।
ইসরায়েলের নাগরিকরা, আমাদের সামনে বিশাল সাফল্য রয়েছে, কিন্তু কাজ এখনও শেষ হয়নি। আগামী দিনগুলোয় আমরা বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবো এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা মোকাবিলা করব। নাসরাল্লাহ আমাদের 'মাকড়সার জালের' সাথে তুলনা করেছিলেন। কিন্তু 'মাকড়সার জালের' বদলে তিনি একটি ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী জাতির 'ইস্পাতের টেন্ডন' খুঁজে পেয়েছেন, যারা তাদের অস্তিত্ব এবং ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শুধু হিজবুল্লাহই নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যই তা বুঝতে পেরেছে। যারা ইরানের সহিংস শাসনের বিরোধিতা করে, লেবানন, সিরিয়া, ইরান এবং অন্যান্য স্থানে যারা তাদের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, আজ তাদের মনে আশা জেগেছে। আমি সেই দেশের নাগরিকদের বলতে চাই: ইসরায়েল আপনাদের পাশে আছে।
আর আয়াতুল্লাহদের শাসনকে বলছি; যারা আমাদের আঘাত করে, আমরা তাদের পাল্টা আঘাত করি। ইরান বা মধ্যপ্রাচ্যের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ইসরায়েলের দীর্ঘ হাত পৌঁছাতে পারে না। তোমরা এরইমধ্যে তা জেনে গেছো। ইসরায়েলের নাগরিকগণ, এটা আমাদের জন্য যুগান্তকারী দিন। আমরা এমন একটি ঐতিহাসিক বাঁকে আছি, যা ভবিষ্যতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এক বছর আগে, ৭ অক্টোবর, আমাদের শত্রুরা আমাদের আক্রমণ করেছিল এবং ভেবেছিল ইসরায়েল ধ্বংসের পথে। এক বছর পরে, আঘাতের পর আঘাত, সাফল্যের পর সাফল্যে, তারা বুঝতে পেরেছে- তাদের আশায় গুঁড়েবালি। ইসরায়েল এগিয়ে যাচ্ছে; আমরা জিতছি। আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে, আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবো, আমাদের বাসিন্দাদের বাড়ি ফিরিয়ে আনবো, এবং আমাদের সকল বন্দিকে মুক্ত করবো। আমরা তাদের এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে যাইনি। আমার ভাই ও বোনেরা, প্রিয় ইসরায়েলের নাগরিকরা, আজ আমি জোর দিয়ে বলছি, আবারও—আমরা একসঙ্গে লড়াই করব এবং—ঈশ্বরের সাহায্যে—একসঙ্গে জয়ী হব।
মন্তব্য করুন