কথা বলতে পারেন সাত ভাষায়। আছে পার্টিকেল ফিজিক্সে পিএইচডি। হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের দেয়ালজুড়ে তার রয়েছে মানবিক বিভিন্ন কাজের স্বীকৃতি। কাজের প্রয়োজনে ছুটে গেছেন আফ্রিকা থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। হঠাৎ করেই আলোচনায় চলে এসেছেন এই নারী। গেল সপ্তাহে লেবাননে কয়েক হাজার পেজার বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে রহস্যময়ী এই নারী ক্রিস্টিয়ানা বারসোনি-আরসিদিয়াকোনোর।
গত মঙ্গল ও বুধবার (১৭-১৮ সেপ্টেম্বর) লেবাননজুড়ে একের পর এক পেজার বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। রাস্তাঘাটে, বাজারে, ঘরের ভেতর হঠাৎ পেজার বিস্ফোরণে অন্তত ১২ জন নিহত হন। আহত হন দুই হাজারের বেশি মানুষ। বিস্ফোরিত হওয়া এসব পেজার চালাতেন মূলত লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধারা। ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর পেজার বিস্ফোরণে টালমাটাল হয়ে যায় পুরো লেবানন।
৪৯ বছর বয়সী ইতালিয়ান-হাঙ্গেরিয়ান দ্বৈত নাগরিক বিএসি কনসালটিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং মালিক। খবর বেরিয়েছে, পেজারগুলোর আসল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গোল্ড অ্যাপোলোর হয়ে সেগুলোর ডিজাইন করেছে তার কোম্পানি। তবে এনবিসি নিউজকে ক্রিস্টিয়ানা বলেন, তার কোম্পানি এগুলো বানায়। তিনি বলেন, আমি কেবল মধ্যস্থতাকারী ছিলাম। উৎপাদন তথ্য পুরোপুরি ভুল।
২০২২ সালে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে বিএসি কনসালটিং প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন করা হয়। মজার বিষয় হলো, প্রতিষ্ঠানটিতে মাত্র একজন কর্মী রয়েছেন। আর সেটা ক্রিস্টিয়ানা নিজেই। লেবাননে পেজারের সিরিজ বিস্ফোরণ পর, এখন প্রশ্ন উঠেছে কিভাবে এসব ডিভাইস অস্ত্র বানিয়ে দূর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। সেই উত্তর খুঁজতে গিয়ে নাম উঠে আসছে তাইওয়ান, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া ও নরওয়ের।
ক্রিস্টিয়ানাকে নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন জাগছে, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি নিলেও বিজ্ঞানী হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার দাঁড় করাননি তিনি। পিএইচডি গবেষণায় ক্রিস্টিয়ানার বিষয় ছিল পজিট্রন। অবশ্য কেঁচো খুড়তে গিয়ে বুলগেরিয়াকেন্দ্রিক নর্টা গ্লোবালের নামও উঠে এসেছে। তবে বুলিগেরিয়ার কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের দেশের মাটি ব্যবহার করে ওই পেজার উৎপাদন বা বিক্রির মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
পেজার বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে একের পর এক ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছেন। হতাহতদের মধ্যে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের শীর্ষ একজন কমান্ডারও রয়েছে। অবশ্য পাল্টা হামলায় ইসরায়েলকেও বেকায়দা ফেলতে চাইছে লেবানন।
মন্তব্য করুন