লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হিজবুল্লাহর অপারেশন কমান্ডার ইব্রাহিম আকিলের মাথার দাম ছিল সাত মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় তা দাঁড়ায় ৮৩ কোটি ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার ৪৪৭। আকিল ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোস্ট ওয়ানটেড’ সন্ত্রাসীর তালিকায়। দীর্ঘদিন ধরে তাকে হত্যা বা গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছিল।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৩ সালে বৈরুতে দুটি ট্রাক বোমা হামলার জন্য আকিলকে দায়ী করা হয়। ওই সময় আমেরিকান দূতাবাস এবং একটি ইউএস মেরিন ব্যারাকে হামলার ঘটনায় ৩০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়। এ ঘটনার পর তার খোঁজে বিপুল অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করেছিল মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এমনকি কেউ যদি তার অবস্থান জানিয়ে তথ্য দিতে পারে তবে তাকেও পুরস্কারের জন্য বিবেচিত করার কথা বলা হয়।
আকিল ছিলেন লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ইসরায়েলের চালানো হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী আকিলের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। প্রথমে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধারা আনুষ্ঠানিকভাবে তার নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেনি। পরে লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রে রয়টার্স বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আকিল লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের এলিট ‘রাদওয়ান বাহিনীর’ জ্যেষ্ঠ নেতা ছিলেন। হামলার সময় তিনি একটি বৈঠকে ছিলেন। লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা এবং ফিলিস্তিনের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের মধ্যে ওই বৈঠক চলছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলের হামলায় দুটি ভবন সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
আকিলকে লেবাননে আমেরিকান এবং জার্মান জিম্মিদের অপহরণের নির্দেশ দেওয়ার জন্যও অভিযুক্ত করা হয়। ২০১৯ সালে তাকে গ্লোবাল টেররিস্ট হিসেবে তালিকাভুক্ত করে মার্কিনিরা এবং তাকে হত্যার জন্য প্রচেষ্টার কথা আবারও জানায়।
২০২২ সালে একটি আরবি সংবাদমাধ্যম হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। সাক্ষাৎকারে ১৯৮০-এর দশকে মার্কিন মেরিন ব্যারাকে বোমা হামলা এবং লেবাননে পশ্চিমা স্বার্থের ওপর অন্যান্য আক্রমণের কথা উল্লেখ করে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সেসব হামলার সঙ্গে হিজবুল্লাহ যুক্ত নয়। হামলাগুলো ছোট ছোট গোষ্ঠী করেছিল।
নাসরুল্লাহ মূলত ইসলামিক জিহাদ অর্গানাইজেশন নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেন। ওই সময় গোষ্ঠীটি হামলার দায় স্বীকারও করেছিল। এ সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্য ছিলেন আকিল। পরে তিনি হিজবুল্লাহতে যোগ দেন।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গল ও বুধবার লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ব্যবহার করা কয়েক হাজার পেজার ও ওয়াকিটকিতে একযোগে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ৩৭ জন নিহত ও ৩ হাজার মানুষ আহত হন। এত বড় ধাক্কার পরপর আকিলসহ অন্য কমান্ডারদের হারিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধারা। গেল জুলাইয়ে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আরেকজন শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করেছিল ইসরায়েল।
মন্তব্য করুন