ইসরায়েলের সঙ্গে লেবাননের সর্বাত্মক যুদ্ধ বেধে যাওয়া সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র। অথচ তার আগেই লেবাননের প্রাণকেন্দ্রে আঘাত হেনেছে ইসরায়েল। ভয়াবহ এক সাইবার হামলায় টালমাটাল লেবানন। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা পেজারে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৯ জন নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে। অভাবনীয় এই হামলা কীভাবে চালানো হয়েছে, তা নিয়ে এখনো খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ চলছে। তবে পুরো চিত্র পেতে আরও কিছু দিন সময় লেগে যেতে পারে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ লেবাননজুড়ে একের পর এক পেজার বিস্ফোরিত হতে থাকে। দেশটির প্রতিরোধ যোদ্ধারা বুঝেই উঠতে পারেননি ঠিক কী হয়েছে। হামলার পর পরই আরবি ভাষার কিছু সংবাদমাধ্যম এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে খবর প্রকাশ করে। ইসরায়েল দায় স্বীকার না করলেও দেশটির সংবাদমাধ্যম পেজার বিস্ফোরণ নিয়ে একের পর এক আপডেট দিয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, কয়েক মাস বা বছর ধরে এই হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
প্রতিবেশী দেশে এমন হামলার পর ইসরায়েলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা জরুরি বৈঠক করেছে। ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তারা সম্ভাব্য পাল্টা হামলার আশঙ্কায় অফেন্স ও ডিফেন্স পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। পরে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এমন হামলার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ওই হামলায় লেবাননে ইরানের রাষ্ট্রদূত মোজতবা আমানিও আহত হয়েছেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে ইরান যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার না করে, সেই আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
কারা এবং কীভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে, তা এখনো রহস্যাবৃতই রয়েছে। মোবাইল ফোন, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধারা এখনো পেজার ব্যবহার করেন। এই ছোট ডিভাইসের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। পেজার বিস্ফোরণের পর বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায় এগুলো তাইওয়ান উৎপাদন করেছে। সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানায়, লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধারা তাইওয়ানভিত্তিক গোল্ড অ্যাপোলোর কাছে ৫ হাজার পেজার অর্ডার করেছিল। তবে কোম্পানি এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছে।
একযোগে চালানো এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের হ্যান্ডেলগুলো এ সংক্রান্ত ছবি ও ভিডিওতে ভরে যায়। অভিনব কায়দায় এমন হামলার পর বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গ্রুপের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকেও বার্তা দেওয়া হয়েছে। কয়েক মাস আগেই গ্যালান্ট বলেছিলেন, তার দেশের নতুন সক্ষমতা রয়েছে যা লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা এবং ইসরায়েলি শত্রুদের অবাক করে দেবে। এখন সেই কথার প্রতিধ্বনি যেন শোনা গেল।
মন্তব্য করুন