এক সময় পোলিওর প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী আতঙ্কের কারণ ছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি এবং আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ কর্মসূচিতে রোগটি নির্মূল করা হয়। সেই পোলিও আবার ফিরিয়ে আনছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে গাজায় একজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাতে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ দেখা দিলেও ইসরায়েলি বাহিনী উপত্যকাটিতে পোলিও ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টারত।
ইসরায়েলের এ ধরনের কার্যক্রমের বিরোধিতা করে আসছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। বুধবার (২৮ আগস্ট) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় পোলিও ছড়ানোর ব্যাপারে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। তারা মনে করছে, নেতানিয়াহুর বাহিনীর বাধা উপত্যকায় দ্রুত পোলিও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় ত্রাণসহায়তা বিতরণে বাধা প্রদান, স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোতে আক্রমণ এবং পানি সরবরাহের ক্ষতি করছে। এগুলো সম্ভাব্য বিপর্যয়মূলক পোলিও প্রাদুর্ভাবের সহায়ক।
নিউইয়র্কভিত্তিক অধিকার গোষ্ঠীটি গাজায় কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি শিশুদের টিকা দেওয়ার জন্য অবিলম্বে মানবিক সহায়তা করিডোর উন্মুক্তের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, পোলিও সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য কিন্তু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ছোট শিশুদের আক্রান্তের ঝুঁকি মারাত্মক।
এইচআরডব্লিউর সিনিয়র স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বলেন, যদি ইসরায়েলি সরকার জরুরি সহায়তা অবরুদ্ধ করে এবং পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবকাঠামো ধ্বংস করে, তাহলে এটি এমন একটি রোগের বিস্তারকে সহজতর করবে যা বিশ্বব্যাপী প্রায় নির্মূল করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের অংশীদারদের উচিত নেতানিয়াহুকে অবিলম্বে অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া এবং গাজায় নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। যাতে পোলিওর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সময়মতো টিকা দেওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা এখন ধ্বংসপুরী। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন উপত্যকার বাসিন্দারা। ফলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে সতর্ক করে আসছে জাতিসংঘ। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় দুই দশকের মধ্যে প্রথম পোলিও রোগী শনাক্ত হয়েছে।
গাজায় কয়েক লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই উপত্যাকায় পোলিওর হানা শনাক্ত হয়েছে। ফলে ২৫ বছরের মধ্যে গাজায় প্রথম কোনো পোলিও রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের রামাল্লার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চিকিৎসকরা গাজার ১০ মাস বয়সী এক শিশুর শরীরে পোলিওর উপসর্গ শনাক্ত করেন। জর্ডানের রাজধানী আম্মানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগটি ধরা পড়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার বর্জ্য পানি থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় গত জুনে টাইপ-২ পোলিও ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। জাতিসংঘ মহাসচিব উপত্যকার ছয় লাখ ৪০ হাজারের বেশি শিশুকে সাত দিন করে দুই দফার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। এরপরই পোলিও সংক্রমণের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।
মন্তব্য করুন