সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে গুরুতর এক অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, তিনি ইয়েমেনে হামলা করতে বাদশাহর সই নকল করে ডিগ্রি জারি করেছিলেন। এ নিয়ে দেশটির ক্ষমতার নিয়ন্ত্রকের নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হলো।
ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ ঘিরে জল কম ঘোলা হয়নি। দেশটির ক্ষমতাচ্যুত সৌদিপন্থি প্রেসিডেন্ট আব্দরাব্বুহ মানসুর হাদিকে সাহায্যে ইয়েমেনে হামলা করে সৌদি আরব। কিন্তু ২০১৫ সালে চালানো ওই হামলায় ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের দমাতে ব্যর্থ হয় রিয়াদ।
পরে সৌদি সরকার গত বছর ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে। বিশ্লেষকদের বিশ্বাস, সৌদি নেতৃত্বাধীন ওই হামলা দেশটির তরুণ যুবরাজ মোহাম্মদের জন্য কৌশলগত পরাজয়।
ওই যুদ্ধ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এক দাবি করেছেন সৌদি আরবের একজন ভিন্নমতাবলম্বী কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তার নাম সাদ আল জাবরি। ২০১৭ সালে সৌদি আরব থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সৌদি আরবের গোয়েন্দা প্রধান ছিলেন। বিবিসির ‘দ্য কিংডম: দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট পাওয়ারফুল প্রিন্স’ শিরোনামে একটি ডকুমেন্টরিতে সাক্ষাৎকারে যুবরাজ মোহাম্মদকে নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
আল জাবরি বলেন, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া ইয়েমেন গৃহযুদ্ধ নিয়ে তিনি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুজান রাইসের সঙ্গে আলোচনা করেন। সুজান জানান, যুক্তরাষ্ট্র কেবল আকাশ থেকে হামলায় সমর্থন দেবে। কিন্তু তখন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা যুবরাজ মোহাম্মদ ওয়াশিংটনকে তোয়াক্কা না করে নিজের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইছিলেন।
এরপরই ইয়েমেনে স্থলবাহিনী পাঠাতে রাজকীয় এক ডিক্রি জারি করেন সৌদি বাদশাহ সালমান। বিবিসিকে আল জাবরি বলেন, স্থল হামলার জন্য বাহিনী পাঠানোর ডিক্রি দেখে আমরা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সৌদির সাবেক এই গোয়েন্দা প্রধান দাবি করেন, নিজের বাবা বাদশাহ সালমানের স্বাক্ষর নকল করে রাজকীয় ডিক্রিটি জারি করেছিলেন যুবরাজ মোহাম্মদ। ওই সময় বাদশাহর মানসিক অবস্থা খারাপ হচ্ছিল বলেও জানান আল জাবরি।
নিজের অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ আছে বলেও দাবি করেছেন আল জাবরি। তবে মিডল ইস্ট আই স্বাধীনভাবে তার দাবি নিশ্চিত করতে পারেনি। আল জাবরির দাবি, যুবরাজ মোহাম্মদের এমন সিদ্ধান্তের পর রিয়াদের সিআই স্টেশন প্রধান ক্ষেপে যান। তবে সবাইকে উপেক্ষা করে ২০১৫ সালের মার্চে ইয়েমেনে হামলায় চালায় সৌদি নেতৃত্বাধীন ওই জোট। জোটে সৌদির সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতও ছিল।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জোটের বিমান হামলায় ইয়েমেনে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। জবাবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন বেসরকারি স্থাপনা লক্ষ্য করে মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায় ইয়েমেনের বিদ্রোহীরা। বাদশাহ সালমান ওই ডিক্রিতে সই না করলেও সৌদির অভিযান চালিয়ে যেতে বাধাও দেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের কাছে ‘হার’ মানতে হয় সৌদিকে।
মন্তব্য করুন