তেলের ব্যবসায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন সৌদি আরব। কয়েক বছর আগেও এমন কিছু কল্পনা করা যেত না। কিন্তু এখন এমন নিষ্ঠুর বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে দেশটি।
আসলে তেলের বাজারে নিজেদের উপস্থিতি কমাতে উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছিল সৌদি আরব। রিয়াদের জন্য সেটাই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেল রপ্তানি করে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম আয় হয়েছে সৌদির।
সৌদি সরকারের হিসাব বলছে, জুন মাসে বহির্বিশ্বে তেল বিক্রি করে দেশটির আয় হয়েছে মাত্র ১৭.৭ বিলিয়ন ডলার। বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই পরিমাণ ৯ শতাংশ কম। আর মে মাসের তুলনায় এটা ১২ শতাংশ কম। মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ জুলাইয়ে এক প্রতিবেদনে জানায়, জুন মাসে প্রতি দিন প্রায় ৫৬ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করেছে সৌদি আরব।
জ্বালানি তেলের দাম যেন বেড়ে যায়, সে জন্য তেলের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে সৌদি। কিন্তু ব্রেন্টের দাম প্রতি ব্যারেল এখন ৭৬ ডলারের কাছাকাছি। এই দাম গেল বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় সাত শতাংশ কম। গেল এপ্রিলে ব্রেন্টের প্রতি ব্যারেল ৯১ ডলারে বিক্রি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যিক যুদ্ধ এবং গাজা যুদ্ধে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকির মুখে তখন দাম বেড়ে গিয়েছিল।
এখন তেলের দাম হঠাৎ কমে যাওয়ায় তার নিশ্চিত প্রভাব পড়বে সৌদির ওপর। দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যে মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন, তা বাস্তবায়নে তেলের টাকা খুবই জরুরি। ২০২৪ সালের বাজেটে ভারসাম্য আনতে সৌদি আরবকে তেলের দাম ৯৬.২০ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে, এমনটাই অভিমত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ।
যুবরাজ মোহাম্মদ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন, তা ভিশন ২০৩০ নামে পরিচিত। এই ভিশনের আওতায় সৌদির অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে চাইছে যুবরাজ মোহাম্মদ। আর এজন্য তেল নির্ভরতা কমিয়ে পর্যটন ও ব্যবসা খাতে জোর দিতে চাইছেন তিনি। কিন্তু সৌদিকে পশ্চিমাদের জন্য উন্মুক্ত করার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পেট্রোডলার এবং বিদেশি বিনিয়োগের বিকল্প নেই রিয়াদের কাছে।
অর্থাভাবে এরই মধ্যে স্বপ্নের প্রজেক্ট নিওম নিয়ে ধাক্কা খেয়েছেন যুবরাজ মোহাম্মদ। ২০৩০ সাল নাগাদ ১৭০ কিলোমিটারের দীর্ঘ এই শহরের মাত্র ২.৪ কিলোমিটার নির্মাণ সম্পন্ন হবে। তেলের উৎপাদন কমিয়ে রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বাড়তি সুবিধা দিতে গিয়ে এমন বিপদ ডেকে এনেছে সৌদি আরব। আবার তেলের দাম বার বার ওঠানামা করায় রিয়াদেকে এখন বড় বড় প্রজেক্ট নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে।
মন্তব্য করুন