ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা আল কাসেম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দেইফকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। গাজায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।
ইসরায়েলি হামলায় নিহত কে এই ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রধান সামরিক নেতা তার পরিচয় জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। গত ৭ অক্টোবর আল কাসেম ব্রিগেডের পরিচালিত অপারেশন আল আকসা ফ্লাডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন মোহাম্মদ দেইফ। গাজাজুড়ে হামাসের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক স্থাপন ও বিধ্বংসী বোমা তৈরির কারিগর হিসেবে তাকে চিহ্নিত করে থাকে ইসরায়েল।
শরণার্থী শিবিরে জন্ম
মোহাম্মদ দেইফ ১৯৬৫ সালে গাজার খান ইউনিসের একটি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। এ ক্যাম্পটি ১৯৪৮ সালে আরব ইসরায়েল যুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার আসল নাম মোহাম্মদ মাসরি। পরে তিনি প্রথম ইন্তিফাদা বা ‘১৯৮৭ সালে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রামে হামাসে যোগ দিয়ে মোহাম্মদ দেইফ নামে পরিচিতি পান।
তিনি গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে বিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদন কমিটির প্রধান ছিলেন এবং প্রায়ই মঞ্চে অভিনয় করতেন।
গাজার এ নেতা ১৯৯০ সালের দশকে হামাসের সামরিক শাখা আল কাসেম ব্রিগেডের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলায় জড়িত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে তাকে ধরা হয়। ইসরায়েল তাকে এবং হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়াকে গত ৭ আক্টোবরের হামলার মাস্টারমাইন্ড বলে বিবেচনা করে থাকে।
আক্টোবরের এ হামলার দিন সকালে হামাস ‘আল আকসা ফ্লাড’নামের একটি অভিযান শুরুর ঘোষণা দেওয়া দেইফের বিরল রেকর্ডিং প্রকাশ করে। ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলি অভিযানের বিষয়টি এতে ইংগিত দেওয়া হয়।
৫৮ বছর বয়সী এ নেতাকে জনসম্মুখে খুবই কম দেখা গেছে। ফলে হামাসের টেলিভিশন চ্যানেলে ৭ আক্টোবর যখন তার বক্তব্যের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হয় তখন এ ঘটনার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে বলে ধারণা করতে শুরু করেন। এরপর রেকর্ডিংয়ে তাকে স্পষ্ট বলতে শোনা যায়, দেইফ বলেন, হামাস বারবার ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অপরাধ বন্ধ করতে, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিতে এবং ফিলিস্তিনি ভূমি দখল বন্ধ করতে বারবার সতর্ক করে আসছে।
এসময় মোহাম্মদ দেইফ বলেন, আজ আল আকসার ক্রোধ, আমাদের জনগণ ও জাতির ক্রোধ বিস্ফোরিত হচ্ছে। আমাদের মুজাহিদিন (যোদ্ধা), আজ এ অপরাধীদের বোঝাবে, তাদের সময় শেষ হয়ে গেছে।
সাতবার হত্যাচেষ্টা
আল কাসিম ব্রিগেডের এ প্রধানকে হত্যা করতে সাতবার চেষ্টা চালিয়েছে ইসরায়েল। সর্বশেষ ২০২১ সালে তাকে হত্যার দাবি করা হয়। তবে এ হামলার আগে প্রতিবারই তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
মোহাম্মদ দেইফ ১৯৮৯ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এ সময় তিনি ১৬ মাস কারাগারে ছিলেন।
হামাসের সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলে হামলায় দেইফ একটি চোখ হারান। এ ছাড়া পায়ে গুরুতর আঘাত পান তিনি। ২০১৪ সালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার স্ত্রী, সাত মাসের পূত্র সন্তান এবং তিন বছরের মেয়ে নিহত হন।
গাজার এ নেতা স্মার্টফোনের মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতেন না। তিনি একজন রহস্যপুরুষ ছিলেন। সবসময় তিনি অধরা ও ছায়ার মানুষ ছিলেন।
মন্তব্য করুন