কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩০ এএম
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ইসরায়েলে সরাসরি হামলার নির্দেশ খামেনির

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ছবি : সংগৃহীত
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েলে সরাসরি হামলার নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ইতিমধ্যে গোপনে তিনি হামলার আদেশও জারি করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশটির তিনজন কর্মকর্তা দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে এ তথ্য জানান।

সংবাদমাধ্যমটির বুধবারের (৩১ জুলাই) প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্যদাতারা ইরানের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। তাদের দুজন রেভল্যুশনারি গার্ডের সদস্য। কিন্তু প্রকাশ্যে তথ্যপ্রদানের সুযোগ তাদের না থাকায় সূত্রটি গোপন রাখা হয়েছে। ওই সূত্র জানায়, তেহরানে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার জবাবে পাল্টা আক্রমণের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন খামেনি। ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিঘ্নিতের প্রতিশোধ এবং চলমান উত্তেজনায় নিজেদের শক্তি প্রদর্শনই এ হামলার উদ্দেশ্য।

খামেনি বুধবার সকালে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকে এই আদেশ দেন। হানিয়াহর নিহত হওয়ার খবর প্রকাশের পর এ বৈঠক হয়। এরপরই রেভল্যুশনারি গার্ড ও সামরিক বাহিনী প্রস্তুতি শুরু করেছে।

ইরানের যেকোনো নীতি নির্ধারণে খামেনিই সর্বোচ্চ ব্যক্তি। তার কথাই সর্বশেষ আদেশ হিসেবে পালনীয়। তিনি রেভল্যুশনারি গার্ডসহ দেশের সব সামরিক-আধাসামারিক বাহিনী সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করেন।

এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘কঠোর শাস্তির’ অঙ্গীকার করেছেন। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া তেহরানে নিহত হওয়ার পর তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। ইরানের সরকারি সংবাদসংস্থা ইরনা খামেনির এ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। খামেনি বলেন, হানিয়াকে হত্যার এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসরায়েলের অপরাধী, জঙ্গি ও জায়নবাদী শাসকরা কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। ইরানের ভূখণ্ডে হানিয়ার রক্ত ঝরেছে, প্রতিশোধ নেওয়া এখন আমাদের কর্তব্যে পরিণত হয়েছে। উল্লেখ্য, হানিয়ার মৃত্যুতে বুধবার থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে তেহরান।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের সূত্র বলছে, ইরান কতটা বলপ্রয়োগ করে প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি এড়াতে তাদের পরবর্তী নীতি কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। হতে পারে, ইরানের সামরিক কমান্ডাররা তেলআবিব এবং হাইফার আশপাশে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের সমন্বিত আক্রমণের পরিকল্পনা করছেন। তবে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা এড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে বলে জানান ইরানি কর্মকর্তারা।

আরেকটি বিবেচনাধীন বিকল্প হলো- ইরান একা কোনো হামলায় যাবে না। তারা এ কাজে ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন ও ইরাকের সহযোদ্ধাদের নিয়ে মিত্রবাহিনী গঠন করবে। এরপর চতুর্মুখী আক্রমণ করে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

তেহরানের সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের ফেলো আবাস আসলানি হামাসের রাজনৈতিক প্রধান হানিয়াহর হত্যার পর ইরানের নিরাপত্তার প্রভাব সম্পর্কে আলজাজিরার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, তেহরানে যা ঘটেছে তা ইরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত। সে কারণেই ইরান কোনো না কোনোভাবে অনুভব করবে যে, এটির প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এটি তেহরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ভালো খবর নয়। এ কারণেই আমি মনে করি, ইরানের পক্ষ থেকে একটি প্রতিশোধ বা প্রতিক্রিয়া অনিবার্য হতে পারে। তবে আমি এখনও প্রতিক্রিয়ার মাত্রা সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত নই এবং ইরান এখনও তা নির্ধারণ করেনি। কিন্তু এটি যে নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে ইরানের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ তা পুরো বিশ্ব বুঝতে পারছে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, ইসমাইল হানিয়াহর রক্ত কখনই বৃথা যাবে না। তেহরানে তার শাহাদতবরণ ইরান, ফিলিস্তিন এবং প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মধ্যে গভীর এবং অটুট বন্ধনকে শক্তিশালী করবে।

ইরান ও হামাস এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছে। ইসরায়েল এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে বক্তব্য জানতে চায়। কিন্তু তারা কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। এখনও তারা এ হত্যার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে বিবৃতিও দেয়নি। তবে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী এবং সামরিক কমান্ডারসহ বিদেশে শত্রুদের হত্যা করার ইসরায়েলের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

এদিকে হানিয়াহর নিহতের খবরে ইসরায়েলে আনন্দের বন্যা বইছে। সরকারি কর্মকর্তা, মন্ত্রী, সাধারণ মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে উল্লাস প্রকাশ করছেন। প্রকাশ্যে তারা স্বস্তি জানাচ্ছেন। এদের মধ্যে ইসরায়েলের ঐতিহ্যবিষয়কমন্ত্রী আমিচে এলিয়াহু বলেন, হানিয়াহর নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ব আরেকটু ভালো হবে।

বুধবার (৩১ জুলাই) সকালে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার খবর জানা যায়। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসমাইল হানিয়াহ গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) একটি বিবৃতি উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হানিয়াহ মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) থেকে তেহরানে অবস্থান করছিলেন। হামাস নেতারা যে ভবনে অবস্থান করছিলেন সেখান থেকে বুধবার (৩১ জুলাই) সকালে হানিয়াহ এবং তার একজন দেহরক্ষীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

বিষয়টি এক বিবৃতিতে হামাসও নিশ্চিত করেছে। তারা বলছে, আমাদের ভাই, নেতা, মুজাহিদ, স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান ইসমাইল হানিয়াহর তেহরানের বাসভবনে বিশ্বাসঘাতক জায়নবাদীরা হামলা করেছে। তিনি শহীদ হয়েছেন। ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ফিলিস্তিনি জনগণ, আরব ও ইসলামি জাতি এবং বিশ্বের সব স্বাধীন মানুষের কাছে শোকের দাবি করে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: ইরান ইসরায়েল হামলা,ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পিটিআইয়ের চূড়ান্ত বিক্ষোভে অচল পাকিস্তান

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন রাষ্ট্রপক্ষের

উখিয়া সীমান্তে পিস্তল-গুলিসহ যুবক আটক

শরীরের সবচেয়ে নোংরা অংশ কোনটি, জানলে অবাক হবেন

ব্রাজিলে বাস খাদে পড়ে নিহত ২৩

ঢাকায় ট্রেনের ৩ বগি লাইনচ্যুত

মেঘে ঢেকেছে ঢাকার আকাশ, বৃষ্টি হবে কবে?

উত্তরে হঠাৎ তীব্র শীত

আজ ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’

অকেজো হওয়ার পথে শিক্ষার্থী তামিমের হাত

১০

ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ ইহুদি

১১

শসা খেলে কি আসলেই ওজন কমে? 

১২

পাবনায় চরমপন্থি দলের সাবেক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

১৩

লেবানন থেকে ইসরায়েলে শত শত রকেট হামলা

১৪

জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থায় চাকরি, আবেদন শেষ তারিখ ১ ডিসেম্বর

১৫

টিভিতে আজ যেসব খেলা দেখা যাবে

১৬

২৫ নভেম্বর: আজকের নামাজের সময়সূচি

১৭

সোমবার ঢাকার যেসব এলাকায় মার্কেট বন্ধ

১৮

২৫ নভেম্বর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৯

মেঘনা গ্রুপে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির সুযোগ

২০
X