ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার খবরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইরানের মাটিতে এ গুপ্তহত্যার ঘটনা নতুন করে ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ, ইতোমধ্যে হামাস হত্যার ঘটনায় জায়নবাদীদের দায়ী করেছে। এখন চারপাশে আলোচনা চলছে, এবার কী হবে? কী করবে ইরান?
আলজাজিরার খবরে বলা হয়, কয়েক মাস আগেই ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা দেখেছে বিশ্ব। যা মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেও শেষমেশ ক্ষান্ত হয়। এবার তেহরানে হানিয়াহ খুনের ঘটনা ইরানের গালে চপেটাঘাত। দেশটির অভ্যন্তরীণ দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতে সুস্পষ্ট। নিজেদের মর্যাদা রক্ষার স্বার্থেও যদি ইরান সামরিক জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তবে পরিস্থিতি বেশ ঘোলাটে হয়ে যাবে।
আলজাজিরার বিশ্লেষণ বলছে, সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলার জবাবে ৩০০-এর বেশি ড্রোন-মিসাইল ছোড়ে তেহরান। ইসরায়েলে সরাসরি এটিই প্রথম ইরানের হামলা। জবাবে ইসরায়েলও হামলা চালায়। তখন পুরো বিশ্ব এ প্রতিক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এবারও ইরান তার মাটিতে গুপ্তহত্যার বিচার চাইতে পারে। বর্তমানে সব অভিযোগ যেহেতু ইসরায়েলের দিকে সেহেতু নেতানিয়াহুর দিকেই বন্দুক তাক করতে পারে ইরান। তবে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা এখনই বলা কঠিন। পুরো মধ্যপ্রাচ্য ইরানের প্রতিক্রিয়ার দিকে চেয়ে আছে। তেহরানের ঘোষণার সঙ্গে যোগ দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে হিজবুল্লাহ ও হুতিরা ।
তেহরানের সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের ফেলো আবাস আসলানি হামাসের রাজনৈতিক প্রধান হানিয়াহর হত্যার পর ইরানের নিরাপত্তার প্রভাব সম্পর্কে আলজাজিরার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, তেহরানে যা ঘটেছে তা ইরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত। সে কারণেই ইরান কোনো না কোনোভাবে অনুভব করবে যে, এটির প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এটি তেহরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ভালো খবর নয়। এ কারণেই আমি মনে করি, ইরানের পক্ষ থেকে একটি প্রতিশোধ বা প্রতিক্রিয়া অনিবার্য হতে পারে। তবে আমি এখনও প্রতিক্রিয়ার মাত্রা সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত নই এবং ইরান এখনও তা নির্ধারণ করেনি। কিন্তু এটি যে নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে ইরানের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ তা পুরো বিশ্ব বুঝতে পারছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, ইসমাইল হানিয়াহর রক্ত কখনই বৃথা যাবে না। তেহরানে তার শাহাদতবরণ ইরান, ফিলিস্তিন এবং প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মধ্যে গভীর এবং অটুট বন্ধনকে শক্তিশালী করবে।
এদিকে ইরানের সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক কমিটি জরুরি বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে হানিয়াহর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সর্বশেষ প্রাপ্ত গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেবে ইরান।
বুধবার (৩১ জুলাই) সকালে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার খবর জানা যায়। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসমাইল হানিয়াহ গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) একটি বিবৃতি উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হানিয়াহ মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) থেকে তেহরানে অবস্থান করছিলেন। হামাস নেতারা যে ভবনে অবস্থান করছিলেন সেখান থেকে বুধবার (৩১ জুলাই) সকালে হানিয়াহ এবং তার একজন দেহরক্ষীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
বিষয়টি এক বিবৃতিতে হামাসও নিশ্চিত করেছে। তারা বলছে, আমাদের ভাই, নেতা, মুজাহিদ, স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান ইসমাইল হানিয়াহর তেহরানের বাসভবনে বিশ্বাসঘাতক জায়নবাদীরা হামলা করেছে। তিনি শহীদ হয়েছেন। ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ফিলিস্তিনি জনগণ, আরব ও ইসলামি জাতি এবং বিশ্বের সব স্বাধীন মানুষের কাছে শোকের দাবি করে।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় বিমান হামলা করে ইসরায়েল। সেদিকে যখন মধ্যপ্রাচ্য নজর রাখছিল ঠিক তখন আকস্মিক এক খবর আসে। ঘটনাটি যেন স্তম্ভিত করে দিয়েছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে। চারপাশে আলোচনা চলছে, এবার কী হবে? চলমান গাজা যুদ্ধ ঘিরে নতুন কী ভয়াবহতা সামনে অপেক্ষা করছে?
ইতোমধ্যে আলজাজিরা এক বিশ্লেষণে জানিয়েছে, পরবর্তীতে কী ঘটতে পারে তা অনুমান করা বেশ কঠিন। এর ফলে আরও গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। অপরদিকে হিজবুল্লাহ ও হুতিদের আক্রমণের সম্ভাব্যতা নিয়েও গুঞ্জন চলছে।
মন্তব্য করুন