বিশ্বের নানা প্রান্তে সংঘাত-সহিংসতার মধ্যেও অস্ত্র কেনা-বেচায় কোনো বিরতি নেই। এটি একমাত্র ব্যবসা, যার কাটতি সারা বছর থাকে। আবার অস্ত্রের কোনো জাতি বা ধর্ম নেই। যার হাতে যায়, তার আঙুলের ইশারায় কথা বলে। তাই জাতিগত নৈকট্য থাকা সত্ত্বেও শুধু নিজের স্বার্থে ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কোনো কোনো মুসলিম দেশ।
ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের সখ্য এতটা বেশি যে, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঠেলে তেল আবিবের সামরিক প্রযুক্তি কিনছে এসব দেশ। আর এ তালিকায় আছে উত্তর আফ্রিকার মুসলিম দেশ মরক্কোর নামও।
ইসরায়েল ৯ মাস ধরে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। তারপরও থেমে নেই ইসরায়েলের হামলা। গাজায় একের পর এক হামলা, যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের চিরশত্রু ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে দেশটি। কিনছে ইসরায়েলের সামরিক প্রযুক্তি।
মিডলইস্ট মনিটর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরায়েলের একটি নজরদারি স্যাটেলাইট কিনতে দেশটির সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি সই করেছে মরক্কো। দেশটির কাছে থাকা আগের দুটি স্যাটেলাইটের জায়গা দখল করবে ইসরায়েলের এই নজরদারি স্যাটেলাইটটি। ইসরায়েলের এয়ারস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে অনেকটা গোপনে এই স্যাটেলাইট কিনছে মরক্কো।
মরক্কো কেন এত দামি স্যাটেলাইট কিনছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে নজরদারির জন্যই কেন এত দামি স্যাটেলাইট কিনতে হবে, তা অনেকের মনে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। আবার কোথা থেকে স্যাটেলাইট কেনার টাকা আসবে তা নিয়েও প্রশ্নের শেষ নেই।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ইসরায়েলের যে প্রতিষ্ঠান ফিলিস্তিনে প্রতিদিন হামলা চালাচ্ছে, তাদের কাছ থেকেই কেনা হচ্ছে এই স্যাটেলাইট। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামরিক সম্পর্ক বেশ জোরদার করেছে মরক্কো ও ইসরায়েল। আব্রাহাম অ্যাকর্ডের মাধ্যমে কয়েক বছর আগে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে মরক্কো।
এরপর থেকেই ওই শান্তি চুক্তির ফায়দা নিতে শুরু করে রাবাত। যদিও উত্তর আফ্রিকায় ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আপত্তি তুলেছে ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশ। বিশেষ করে মরক্কোর চিরশত্রু আলজেরিয়া এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
এর আগে চলতি বছরের মে মাসে ইসরায়েলের ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্লুবার্ড অ্যারো সিস্টেমসের সঙ্গে আরেকটি চুক্তি করে মরক্কো। এই প্রতিষ্ঠানেও ইসরায়েল এয়ারস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কী চুক্তি হয়েছে, তা খোলাসা করেনি মরক্কো।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, নিকট ভবিষ্যতে মরক্কো নিজেই সামরিক ড্রোন তৈরির সক্ষমতা অর্জন করবে। কিন্তু মরক্কো ড্রোন উৎপাদন শুরু করলে তা নিশ্চিতভাবেই ক্ষুব্ধ করে তুলবে আলজেরিয়াকে। মরক্কোর সঙ্গে পশ্চিম সাহারা নিয়ে আলজেরিয়ার দশক-পুরোনো দ্বন্দ্ব রয়েছে।
আবার নিজ দেশের সীমানায় অন্য দেশের উপস্থিতি নিয়ে বরাবরই অতিমাত্রায় সতর্ক আলজেরিয়া। তাই ইসরায়েলের উপস্থিতি এই অঞ্চলে আগুনে ঘি ঢালতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন