গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান বিমান হামলায় ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারী ওলা আল-কুর্দ নিহত হয়েছেন। কিন্তু নিজের চোখ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলেও তার গর্ভের সন্তান দেখেছে আলোর মুখ। অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া ওই শিশু এরই মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় পুরো পরিবার নিহত হয়। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় ওলার নবজাতক ও তার স্বামী।
এর আগে গত এপ্রিল মাসে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মায়ের মৃত্যুর পরও গর্ভ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় এক শিশুকে। তখন বিশ্বব্যাপী বেশ আলোড়ন তোলে। শিশুটির নাম রাখা হয়েছিল সাবরিন আল-সাকানি। তবে শেষমেশ শিশুটি মারা যায়।
সর্বশেষ গত ১৯ জুলাই গাজার মধ্যাঞ্চলে আল-নুসেইরেতে ওলার বাড়িতে ভয়ানক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এর তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল, ওলা ছিটকে কয়েক তলা নিচে পড়ে যান। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অন্তঃসত্ত্বা ওলার। এ তথ্য জানিয়েছেন ওলার বাবা আদনান আল-কুর্দ। ওলা ছাড়াও বাড়িতে ছিলেন অন্য নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিরা। হামলায় তাদের সবাই মারা যান। তবে অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান ওলার গর্ভের সন্তান।
আদনান বলেন, যখন তার মেয়ে শহিদ হন, অলৌকিকভাবে তার গর্ভে থাকা ভ্রূণ বেঁচে ছিল। সন্তানকে কোলে তুলে নিতে চেয়েছিল ওলা। তার উপস্থিতিতে ঘর আলোকিত করতে চেয়েছিল। ওলার বিশ্বাস ছিল, তার সন্তান তার শহিদ ভাইদের স্থান পূরণ করবে। একই সঙ্গে তাদের বাড়িতে জীবন ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু নিজের সন্তানকেই দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার।
বিমান হামলার পর ওলাকে নুসেইরেতের আল আওদা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সার্জনরা নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও নবজাতককে ডেলিভারি করতে সক্ষম হন। তার নাম দেওয়া মালেক ইয়াসিন। জন্মের পর দেইর আল-বালাহর আল আকসা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় ইয়াসিনকে। সেখানকার চিকিৎসক খলিল আল-দাকরান বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। শিশুটির জীবন রক্ষা পেয়েছে। সে এখন সুস্থ এবং ভালো আছে।
গাজা যুদ্ধে তিন ছেলেকেই হারিয়েছেন আদনান। এবার হারালেন মেয়েকেও। তবে মেয়ের রেখে যাওয়া চিহ্ন ইয়াসিনকে ঘিরে আশায় বুক বাঁধছেন বৃদ্ধ আদনান। নিজের তিন সন্তানের ছবির দিকে তাকিয়ে আদনান বলেন, ইয়াসিনের চুল তার মৃত মামা ওমরের মতোই বাদামি। আমি তাকে প্রতিদিন দেখতে যাই। সে যেন আমারই একটি অংশ।
গেল নয় মাসের যুদ্ধে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে গাজার অধিকাংশ এলাকা। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানকার চিকিৎসাব্যবস্থা। মেরামতের অবস্থাও নেই ধ্বংস হয়ে যাওয়া হাসপাতালগুলোর। ক্রমাগত ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে হতাহত বাড়তে থাকলেও কোনো ধরনের চিকিৎসা সহায়তা পাওয়ার সুযোগ নেই গজায়। এরইমধ্যে ইয়াসিনের অলৌকিক জন্ম জন্ম দিয়েছে আলোচনার।
মন্তব্য করুন