ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া সংস্কারপন্থি প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাসুদ পেজেশকিয়ানকে নিয়ে কথা বলেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে উপদেশ দেন। খবর আলজাজিরার
শনিবার (৬ জুলাই) ফল ঘোষণার পর খামেনি জনগণের উদ্দেশ্যে এক বিবৃতি দেন। সেখানে তিনি বলেন, পেজেশকিয়ানকে একটি অবাধ ও স্বচ্ছ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়েছে। এ জন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন বয়কট করার জন্য একটি পক্ষ হট্টগোল করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জনগণের কাছে তারা পরাজিত হয়েছে। এ কারণে ইরানের জনগণের শত্রুরা হতাশ। তারা অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি।
খামেনি পেজেশকিয়ানকে উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘উচ্চ ও উজ্জ্বল দিগন্তের (ভবিষ্যতের) দিকে তাকাতে হবে। প্রয়াত রাইসির দ্বারা নির্ধারিত পথে চলে দেশকে এগিয়ে নেবেন। নির্বাচনের সময় প্রতিযোগিতামূলক আচরণ থাকলেও তা বন্ধুত্বে পরিণত হয়। তাই পরে সবাই দেশের বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক অগ্রগতির জন্য তার সর্বোত্তম ক্ষমতার চেষ্টা করেন।’ অর্থাৎ, পেজেশকিয়ানকে সবার সঙ্গে মিলেমিশে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তেমনি সব সময় মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে দেশ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ দেন।
দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের আগে খামেনি বলেছিলেন, প্রথম রাউন্ডে ভোটদান প্রত্যাশীতের চেয়ে কম ছিল। তবে যারা ভোট দেয়নি তারা নির্বাচনের বিরোধী বলে যে প্রচার চলছে; তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
মাসুদ পেজেশকিয়ান শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী কট্টরপন্থি সাইদ জালিলিকে হারিয়ে দ্বিতীয় দফার ভোটে বিজয় অর্জন করেন। শুক্রবার (৫ জুলাই) স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শুরু হয়। গত ২৮ জুন প্রথম দফার ভোটে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় দেশটির নিয়ম অনুযায়ী এগিয়ে থাকা এ দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। প্রথম দফায় পেজেশকিয়ান ৪২ শতাংশ এবং সাইদ জালিলি ৩৯ শতাংশ ভোট পান।
দ্বিতীয় দফায় গণনা করা ৩০ মিলিয়নেরও বেশি ভোটের মধ্যে ৫৩.৩ শতাংশ ভোট পান পেজেশকিয়ান। অপর পক্ষে জালিলি পান ৪৪.৩ শতাংশ ভোট। অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পেজেশকিয়ান ১৬.৩ মিলিয়ন এবং জালিলি ১৩.৫ মিলিয়ন ভোট পেয়েছেন। এরপরই পেজেশকিয়ানের বিজয়ের খবর জানানো হয়।
পেজেশকিয়ান ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সাবেক সংস্কারবাদী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ খাতামির সরকারে এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ইরানের পার্লামেন্টে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের শহর তাবরিজে ২০০৮ সাল থেকে প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন তিনি।
সাবেক এ স্বাস্থ্যমন্ত্রী একজন স্বনামধন্য কার্ডিওলজিস্ট। তিনি তাবরিজ ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সায়েন্সের সাবেক প্রধান ছিলেন। এটি ইরানের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান মেডিকেল প্রতিষ্ঠান।
পেজেশকিয়ান এর আগে ২০১৩ এবং ২০২১ সালেও তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে ২০১৩ সালে তিনি হাসেমি রাফসানজানিকে সমর্থন দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন এবং ২০২১ সালে গার্ডিয়ান কাউন্সিল তার প্রার্থিতা বাতিল করে।
এবার পেজেশকিয়ান নির্বাচনী প্রচারে পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আলোচনায় আসেন। কট্টরপন্থিরা তার সমালোচনায় মুখর হন। অপরদিকে বহির্বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যের আশা জাগায় অনেক ইরানি তার সমর্থন করেন।
মন্তব্য করুন