বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসরায়েল। হাজারো বিক্ষোভকারী রোববার (৭ জুলাই) ভোর থেকে রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে জড়ো হয়ে সমাবেশ করছেন। তারা সড়কগুলো অবরোধ করে রেখেছেন। চলছে খণ্ড খণ্ড মিছিল। এতে রাজধানী তেলআবিব এক প্রকার অবরুদ্ধ।
দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনকারীরা তেলআবিবের কিরিয়া সামরিক সদর দপ্তরের বাইরে এবং জেরুজালেমে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাড়ির কাছে ব্যাপক বিক্ষোভ করছেন। টানা স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে রাজপথ। সড়কে অবস্থান নিয়ে কোনো গাড়ি চলতে দিচ্ছেন না।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, ইসরায়েলিরা আর যুদ্ধ চান না। তারা গাজায় জিম্মি স্বজনদের ফেরত চান। যুদ্ধ বন্ধ করে হলেও জিম্মি নাগরিকদের উদ্ধার করতে হবে। এ ছাড়া গাজা পরিস্থিতি সামাল দিতে নেতানিয়াহু ব্যর্থ। তাকে পদত্যাগ করে আগাম নির্বাচন দিতে হবে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে দেশটিতে ১ হাজার ২০০ এর বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। হামলাকারীরা আড়াই শ’র বেশি জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। সেই দিনে অপহৃত হওয়া অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখনও গাজায় বন্দি রয়েছেন।
এরপর থেকে ইসরায়েলিরা জিম্মিদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন। কিন্তু নেতানিয়াহু সরকার জিম্মি উদ্ধারে আন্তরিক নয়; এমন অভিযোগে শুরু হয় বিক্ষোভ। দিন দিন দেশটিতে বিক্ষোভের পরিধি বাড়ছে। এমনকি রোববারের আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে ১৫০টির বেশি কোম্পানি। তারা বলেছে, বিক্ষোভে অংশ নিতে ইচ্ছুকদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের মুক্তি দিতে মার্কিন প্রস্তাবে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস। গোষ্ঠীটির একটি সিনিয়র সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। শনিবার (৬ জুলাই) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা ও জিম্মিদের মুক্তি দিতে মার্কিন প্রস্তাবে রাজি হয়েছে হামাস। এ প্রস্তাব অনুসারে প্রথম ধাপে ১৬ দিনের জন্য গাজায় যুদ্ধবিরতি হতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রটি জানিয়েছে, চুক্তি স্বাক্ষরের আগে ইসরায়েলকে উপত্যকায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য সম্মত হওয়ার শর্তারোপ করেছে হামাস। এরপর প্রথম স্তরের ছয় সপ্তাহ যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায় তারা।
চুক্তিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, চুক্তিতে ইসরায়েল সম্মত হলে যুদ্ধবিরতির একটি স্থায়ী কাঠামো তৈরি হবে এবং তা গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে নয় মাস ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসরায়েলের একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে চুক্তিতে বাস্তবায়িত হওয়ার সত্যিকারের সুযোগ রয়েছে। এটি গাজায় ৯ মাসব্যাপী যুদ্ধের বিপরীতে অতীতের অগ্রহণযোগ্য শর্তগুলোর বিপরীতে একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক মুখপাত্রের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি। তারা জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত আলোচনা চলবে। এখনো দুপক্ষের মধ্যে অনেক ফাঁক রয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।
এর আগে গাজায় তিন স্তরের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবনা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন পর্বের এই প্রস্তাবের শুরুতে ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধ বিরতির কথা বলেছে ইসরায়েল। এটি হবে যুদ্ধ বিরতির প্রথম পর্যায়। এ সময়ে গাজার সব জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হবে।
যুদ্ধবিরতির সময় হামাস ‘নির্দিষ্ট সংখ্যক’ জিম্মিকে মুক্তি দেবে। তাদের মধ্যে নারী, বয়স্ক ব্যক্তি এবং আহত জিম্মিরা থাকবেন। এর বিনিময়ে ইসরায়েলে বন্দি থাকা কয়েকশ মানুষকে মুক্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া হামাসের হাতে জিম্মি অবস্থায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে হবে।
গাজার সব এলাকায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িঘরে ফিরতে সুযোগ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাড়ানো হবে। গাজায় প্রতিদিন মানবিক সহায়তাবাহী ৬০০ ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজাবাসীর জন্য হাজারো সাময়িক আবাসনের ব্যবস্থা করবে।
ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা চলমান থাকবে। যদি আলোচনা সফল হয়, তাহলে পরবর্তী পর্যায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করা হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে বাদবাকি জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস। তাদের মধ্যে জিম্মি পুরুষ সেনারাও থাকবেন। সেই সঙ্গে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বশেষ সেনাকেও সরিয়ে নেওয়া হবে। যুদ্ধবিরতিকে ‘স্থায়ীভাবে শত্রুতা বন্ধে’ উন্নীত করা হবে।
তৃতীয় পর্যায়ে জিম্মি ফেরানোর প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ করা হবে। গাজার জন্য বড় ধরনের একটি ‘পুনর্গঠন পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন শুরু করা হবে। এর আওতায় মার্কিন ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজা উপত্যকায় বাড়ি, বিদ্যালয় ও হাসপাতাল পুনর্নির্মাণ করা হবে।
মন্তব্য করুন