ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংস্কারপন্থি প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান বিজয়ী হয়েছেন। এ জয়ের মধ্য দিয়ে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির স্থলাভিষিক্ত হলেন তিনি। শনিবার (৬ জুলাই) সকালে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। খবর আলজাজিরার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার প্রদত্ত ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে পেজেশকিয়ান ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।’
মাসুদ পেজেশকিয়ান শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী কট্টরপন্থি সাইদ জালিলিকে হারিয়ে দ্বিতীয় দফার ভোটে বিজয় অর্জন করেন। শুক্রবার (৫ জুলাই) স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শুরু হয়। গত ২৮ জুন প্রথম দফার ভোটে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় দেশটির নিয়ম অনুযায়ী এগিয়ে থাকা এ দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। প্রথম দফায় পেজেশকিয়ান ৪২ শতাংশ এবং সাইদ জালিলি ৩৯ শতাংশ ভোট পান।
দ্বিতীয় দফায় গণনা করা ৩০ মিলিয়নেরও বেশি ভোটের মধ্যে ৫৩.৩ শতাংশ ভোট পান পেজেশকিয়ান। অপর পক্ষে জালিলি পান ৪৪.৩ শতাংশ ভোট। অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পেজেশকিয়ান ১৬.৩ মিলিয়ন এবং জালিলি ১৩.৫ মিলিয়ন ভোট পেয়েছেন। এরপরই পেজেশকিয়ানের বিজয়ের খবর জানানো হয়।
এর পরপরই স্থানীয় সময় শনিবার (৬ জুলাই) ভোরে পেজেশকিয়ানের সমর্থকরা তেহরানসহ বিভিন্ন শহরের রাস্তায় আনন্দ মিছিল বের করেন। তারা গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও চত্বরে জড়ো হয়ে জয় উদ্যাপন করছেন। এক ভিডিওতে দেখা যায়, উচ্ছ্বসিত জনতা নেচে-গেয়ে আনন্দ করছেন। অনেকে গাড়ির হর্ন বাজিয়ে গানের তালে তাল দিচ্ছেন।
পেজেশকিয়ান ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সাবেক সংস্কারবাদী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ খাতামির সরকারে এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ইরানের পার্লামেন্টে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের শহর তাবরিজে ২০০৮ সাল থেকে প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন তিনি।
সাবেক এ স্বাস্থ্যমন্ত্রী একজন স্বনামধন্য কার্ডিওলজিস্ট। তিনি তাবরিজ ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সায়েন্সের সাবেক প্রধান ছিলেন। এটি ইরানের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান মেডিকেল প্রতিষ্ঠান।
পেজেশকিয়ান এর আগে ২০১৩ এবং ২০২১ সালেও তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে ২০১৩ সালে তিনি হাসেমি রাফসানজানিকে সমর্থন দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন এবং ২০২১ সালে গার্ডিয়ান কাউন্সিল তার প্রার্থিতা বাতিল করে।
এবার পেজেশকিয়ান নির্বাচনী প্রচারে পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আলোচনায় আসেন। কট্টরপন্থিরা তার সমালোচনায় মুখর হন। অপরদিকে বহির্বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যের আশা জাগায় অনেক ইরানি তার সমর্থন করেন।
ইরানের ক্ষমতা বেশ কয়েক বছর ধরে রক্ষণশীলদের হাতে রয়েছে। তবে পেজেশকিয়ান মনোনয়ন পাওয়ায় সংস্কারপন্থিরা আশার আলো দেখছেন। নির্বাচনেও তার ফলাফলই প্রতিফলিত হলো।
মন্তব্য করুন