ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নারকীয় হামলা শুরুর পর যে শক্তিগুলো সরাসরি গাজার পক্ষে দাঁড়িয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হিজবুল্লাহ। লেবাননের ইসলামী গোষ্ঠীটিকে বিশ্বের রাষ্ট্রবিহীন সবচেয়ে দুর্ধর্ষ এবং সুশৃঙ্খল সামরিক বাহিনী হিসেবে গণ্য করা হয়। গোষ্ঠীটি বারবারই ইসরায়েলের অভ্যন্তরে তাদের হামলার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে আসছে।
সম্প্রতি ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে উত্তেজনা চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের অনবরত বোমা হামলার প্রতিবাদে তেল আবিব, হাইফাসহ ইহুদিবাদীদের অন্যান্য শহর লক্ষ্যে ডজন ডজন রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে লেবানন। এসব হামলায় যোগ দিচ্ছে অন্যান্য ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোও। বেছে বেছে তারা টার্গেট করছে ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনা, সেনাদের অবস্থান, সমুদ্রবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ সব এলাকা।
হিজবুল্লাহর প্রতিরোধ হামলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে। বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কায় পালিয়ে যেতে শুরু করেছে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে লেবাননে সর্বাত্মক হামলা শুরু করার হুঙ্কার দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহু যখন সেনাবাহিনীকে নতুন যুদ্ধ ফ্রন্টের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছেন তখন চারদিক থেকে তাকে সতর্ক করছে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। হিজবুল্লাহর কাছে মজুত অস্ত্রে উদ্বিগ্ন তারা। তারা মনে করছেন, হামাসের ওপর হামলা যতটা সহজ ছিল হিজবুল্লাহ ততটা সহজ প্রতিপক্ষ নয়। প্রকৃতপক্ষে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর শক্তি নিয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই তাদের। ইসরায়েলের শীর্ষ সমর কর্তারা প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন, হামাসের চেয়ে বহু গুণে শক্তিশালী হিজবুল্লাহ।
এমন সময় হিজবুল্লাহর অস্ত্রসম্ভার নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাম আমিনাচ। তিনি বলেছেন, লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ হচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি রকেট পরাশক্তির একটি। হিজবুল্লাহর হাতে থাকা রকেটের সংখ্যাগত দিক বিবেচনা করে তিনি একথা বলেছেন।
তিনি বলেন- আমেরিকা, চীন, রাশিয়া এবং জার্মানির পাশাপাশি হিজবুল্লাহর হাতে সবচেয়ে বেশি রকেট রয়েছে কিন্তু ইসরায়েলের জনগণ তাদের এই ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির হুমকি সম্পর্কে বুঝতে পারছে না। আমিনাচ জোর দিয়ে বলেন, পুরো লেবাননকে মোকাবিলা করা ছাড়া ইসরায়েল হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াই করতে পারবে না।
যখন সীমান্তে প্রতিদিন হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের বর্বর সেনাদের মধ্যে সংঘাত হচ্ছে এবং দখলদার ইসরায়েল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের হুমকি দিয়েছে তখন জেনারেল আমিনাচ এসব কথা বললেন। অন্যদিকে, হিজবুল্লাহর কর্মকর্তারা বারবার বলছেন, তারা তারা ইহুদিবাদীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চান না কিন্তু ইসরায়েল যদি যুদ্ধ শুরু করে তাহলে তা মোকাবিলার জন্য হিজবুল্লাহ প্রস্তুত রয়েছে।
সম্প্রতি, হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ বলেছেন, বর্বর এই শক্তি যদি আগ্রাসন চালায় তাহলে ইসরায়েলের ভেতরে কোনো নিরাপদ স্থান থাকবে না। এ ছাড়া লেবাননের গ্রান্ড শিয়া মুফতি শেখ আহমাদ কাবালান বলেছেন, হিজবুল্লাহর হাতে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে এবং ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করলে প্রতিরোধ যোদ্ধারা ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে অন্তত পাঁচ লাখ ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে পারবে।
সূত্র : আল মায়েদান ও জেরুজালেম পোস্ট
মন্তব্য করুন