মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীরের প্রত্যাহারের দাবিতে উত্তাল মালয়েশিয়া বাংলাদেশি প্রবাসী। রোববার (২২ ডিসেম্বর) তারা খোরশেদ আলম খাস্তগীরের প্রত্যাহারের দাবিতে দূতাবাস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন।
এ সময় প্রবাসীরা তাকে প্রত্যাহারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। প্রবাসী সালাউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- রাসেল সরদার, সোহানুর রহমান, মামুন, জুয়েল ও পারভেজসহ অন্য প্রবাসীরা।
এ সময় লিখিত ব্ক্তব্যে প্রবাসীরা বলেন, যদি আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীরের প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে বাংলাদেশ দূতাবাসকে চরম মূল্য দিতে হবে। প্রবাসীরা বলেন, আমরা তার দ্বারা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি। পাসপোর্ট করতে গেলে ৬ থেকে ৭ মাস লেগে যায়। বিভিন্ন দালাল ধরতে হয়। আমরা এক প্রকাল নানা হয়রানির মধ্যে ভুগতেছি। আমাদের যাতে আর ভোগান্তি পোহাতে না হয় সেজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি কামনা করি। এ সময় তারা ‘খোরশেদের কালো হাত; ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ স্লোগান দিতে থাকেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৫ আগস্টের পট-পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের বিশ্বস্ত এই আমলাকে প্রবাসীদের দাবির প্রেক্ষিতে পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হিসেবে বদলির অর্ডার করা হয়। পরে সমালোচনার মুখে সেই বদলির আদেশও বাতিল করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র তৌফিক হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ই-পাসপোর্ট ও ভিসা সেবা কার্যক্রমের জন্য চুক্তি সম্পাদন করা হলেও চুক্তি বহির্ভূতভাবে ট্রাভেল পাস ও এনআইডি সেবার মতো অত্যন্ত সংবেদনশীল কাজও বাগিয়ে নেয় ইএসকেএল কোম্পানি। ৪৫ রিঙ্গিতের বিনিময়ে হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পাসের জন্য সাধারণ প্রবাসীদের অতিরিক্ত ২০ রিঙ্গিতের চার্জ আদায় করা হচ্ছে কোনো প্রকার চুক্তি ছাড়া। কোনো প্রকার সরকারি ফি ছাড়া প্রবাসীদের যে এনআইডি সেবা প্রদান করার কথা, সেই সেবা নিতে প্রবাসীদের থেকে ৭৫ রিঙ্গিত আদায় করা হচ্ছে। চুক্তি বহির্ভূতভাবে জোরপূর্বক অতিরিক্ত চার্জ আদায়ও করা হচ্ছে প্রবাসীদের নিকট হতে। এ কাজে নির্লিপ্তভাবে সহযোগিতা করেছিলেন কাউন্সেলর জিএম রানার। যিনি নিজেকে ডেপুটি হাইকমিশনারের অত্যন্ত আস্তাভাজন হিসেবে মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের কাছে পরিচিত ছিলেন।
মো. ফারুক নামে আর এক প্রবাসী বলেন, বিগত সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের পাসপোর্ট সেবা প্রদানে তৎকালীন সরকার কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দরপত্র ছাড়াই এবং পূর্বে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ট্রাভেল পাস, পাসপোর্ট এবং এআইডির মতো স্পর্শকাতর কাজের দায়িত্ব ইএসকেএল নামক একটি বেসরকারি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়।
এরপর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন ভিডিও কলের মাধ্যমে ইএসকেএল উদ্বোধন করেন। দূতাবাসের পাসপোর্ট ডিপার্টমেন্টকে অকার্যকর করার নীল নকশা চলেছে। চুক্তি অনুসারে প্রতিটা পাসপোর্ট আবেদনের বিপরীতে দুতাবাসের একাউন্টে রিঙ্গিত জমা করার কথা থাকলেও জুন মাস পর্যন্ত তা না করে খেয়াল খুশি মতো রিঙ্গিত জমা করায় আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। দুতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমনের দোহাই দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইএসকেএলকে অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দেওয়া পাসপোর্টের ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড ইএসকেএল কোম্পানিকে পাইয়ে দেন ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীর।
মন্তব্য করুন