ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা শেষ হতে না হতেই তোড়জোড় শুরু হয়েছে দুই জোট শিবিরে। ভোটে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি কোনো দল। ফলে আসতে যাচ্ছে জোট সরকার। আর এই জোট সরকারকে সামনে রেখে কে কাকে কাছে টানতে পারে সেটাই যেন এবার বড় খেলা হয়ে উঠেছে।
জোট সরকারকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনীতির কিংমেকার হয়ে উঠেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের দুই শরিক ডাবল এন নীতিশ-নাইডু।
তেলেগু দেশম পার্টির প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু ও বিহারের জনতা দল-ইউনাইটেডের (জেডি-ইউ) কর্নধার নীতিশ কুমার। এনডিএ জোটের প্রাপ্ত মোট ২৯৪টি আসনের মধ্যে এই দুই শরিকের হাতে রয়েছে ২৮টি আসন।
সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৭২টি আসন। যেখানে বিজেপি জিতেছে ২৪০টি আসনে। ফলে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় নরেন্দ্র মোদিকে এবার সরকার গঠনে এনডিএ জোটের ওপরই নির্ভর করতে হবে। অর্থাৎ তৃতীয় মেয়াদে নরেন্দ্র মোদির দিল্লিতে সরকার গঠনের চাবিকাঠি আপাতত এনডিএ শরিকদের হাতে।
আর এমন পরিস্থিতিতে গুঞ্জন উঠেছে, সরকার গঠনের জন্য তেলেগু দেশম পার্টির প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু ও বিহারের জনতা দল-ইউনাইটেডের (জেডি-ইউ) কর্নধার নীতিশ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট। ইন্ডিয়া জোট চাইছে নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডু নরেন্দ্র মোদির জোট ত্যাগ করে কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরকার গঠন করুক।
দুটি দলই ইন্ডিয়া জোটের সাবেক শরিক। পরে দলবদল করে তারা বিজেপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবে বৈরিতা ভুলে সরকার গঠনে এই দুই নেতাকে জোটে ফিরিয়ে আনতে চাইছে বিরোধীশিবির।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, দ্বিতীয় মোদি সরকারের মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠক আজ। দিল্লিতে তৃতীয় দফায় সরকার গড়তে জোট শরিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে বিজেপি। এনডিএ-র বৈঠকে যোগ দিতে নীতীশ-নাইডু ছাড়াও দিল্লিতে পৌঁছেছেন একনাথ শিণ্ডে ও জিতনরাম মাঝি। আজ (বুধবার) এ বৈঠকে বসছে এনডিএ জোট। আর এদিনই ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক।
নীতিশ-নাইডু জোটবদল করবেন কিনা সেই গুঞ্জন আরও ডালপালা বিস্তার করেছে নীতীশ কুমার ও ইন্ডিয়া জোটভুক্ত আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব একই ফ্লাইটে দিল্লি যাওয়ার খবরে। তবে কি নীতিশ-নাইডু জোটবদল করে বিরোধীশিবিরে যোগ দেবেন? কি বলেছেন নীতিশ-নাইডু?
নীতিশ কুমারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং জেডিইউ নেতা কেসি ত্যাগী ভোটের ফল বেরনোর পরই সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছিলেন, তার দল এনডিএ-তেই থাকবে। ইন্ডয়া-জোটে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই তাদের। এটাও বলা হয়েছে, অতীতে বারবার শিবির বদল করার রেকর্ড রয়েছে নীতিশ কুমারের। তাই এবার এই দুর্নাম আর নিতে চাননা তিনি।
আর অন্ধ্রপ্রদেশের ফল সামনে আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন চন্দ্রবাবু নায়ডুও। তিনি জানিয়েছিলেন, তার দল এবং বিজেপি একসঙ্গে রাজ্যটিকে পুনর্গঠন করবে। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে তারা নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেই থাকছেন।
তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। দরকষাকষি এবং দেনাপাওনার খেলায় কে কাকে কাছে টানতে পারবে সেটাই এই খেরার মূল বিষয়। ৯ জুন তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিতে পারেন মোদি। তবে তার আগে যদি জোট সমীকরণ ওলটপালট হয়ে যায়, তাহলে দিল্লির মসনদে হতে পারে পালাবদল।
মন্তব্য করুন