ভারতের সদ্য শেষ হওয়া অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল আজ মঙ্গলবার (৪ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। এ জন্য নির্দিষ্ট কেন্দ্রগুলোতে ইতিমধ্যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোটের ফলাফল ঘিরে সহিংসতা এড়াতে তৎপর কেন্দ্রীয় ও রাজ্যগুলোর প্রশাসন। এ জন্য পূর্বপ্রস্তুতির কোনো কমতি রাখেনি তারা।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি কেন্দ্রেই সুরক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। কমিশনের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল, রাজ্যের প্রতিটি গণনাকেন্দ্রে তিন স্তরের নিরাপত্তা রাখা হয়েছে।
আজকের দিনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রথম স্তরে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। দ্বিতীয় স্তরে আছে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী। শেষ স্তরে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে স্থানীয় থানা পুলিশ।
বিজেপি-ই কি আবার ক্ষমতায়? এর আগে গত শনিবার শেষ দফা ভোটের দিন সন্ধ্যায় যে বুথফেরত জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়, তার সবগুলোতেই বলা হয়, ৩৫০টিরও বেশি আসন পেয়ে ফের ক্ষমতায় আসছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ। অন্যদিকে মাত্র ১৪১-১৬২টি আসন পেতে পারে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট। বুথফেরত এ জরিপের ফল প্রকাশের পর সারা দেশে বিজয় উৎসব করার প্রস্তুতিও সেরে ফেলেছে বিজেপি।
চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই ‘দাপ্তরিক কাজ’ও শুরু করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রোববার সব মিলিয়ে সাতটি বৈঠক করে মোদি স্পষ্ট করে দেন, নির্বাচনের ফল তার দলের পক্ষেই যাচ্ছে। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী তিনিই হবেন। এ রকম অবস্থায় সবাই তাকিয়ে আছেন আজকের চূড়ান্ত নির্বাচনী ফলের দিকে। বুথফেরত জরিপের ফল কতটা সত্যি হয়, সেটারও একটা পরীক্ষা হয়ে যাবে আজ। খবর এনডিটিভির।
শনিবার বুথফেরত জরিপের ফল অনুযায়ী বিজেপি জোট ৩৫০টিরও বেশি আসনে জয় পেতে যাচ্ছে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ে বেশি আসন পেতে যাচ্ছে বিজেপি। দক্ষিণেও এবার ভালো ফল করতে যাচ্ছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলটি। কেরালায়ও প্রথমবারের মতো জয়ের খাতা খোলার আভাস দিয়ে রেখেছে বুথফেরত জরিপগুলো। সব মিলিয়ে বিজেপি জোট ক্ষমতায় আসছে আর নরেন্দ্র মোদিই যে আবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন তা একরকম নিশ্চিত।
বিজয় উৎসবের প্রস্তুতি এরই মধ্যে সারা দেশে বিজয় উদযাপন করার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে বিজেপি। আগামী বৃহস্পতিবার এ বিজয় উৎসব হতে পারে। এ বিজয় উৎসব যাতে বর্ণাঢ্য হয় সে জন্য নির্দেশও দিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদি রোববার সারা দিনে সাতটি বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম ১০০ দিনে বিজেপি কী ধরনের কাজ করতে পারে বা প্রতিশ্রুতি দিতে পারে, তাও পর্যালোচনা করা হয়।
আর সোমবার এনডিটিভি প্রধানমন্ত্রীর একটি দীর্ঘ চিঠি প্রকাশ করে, যেখানে মোদি ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার ভাবনা উল্লেখ করেন। তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে তার বহুল আলোচিত ধ্যান শেষে দিল্লি ফেরার পথে তিনি এ চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘মা ভারতীর পায়ের কাছে বসে আজ আমি আরও একবার আমার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করলাম, আমার জীবন, আমার শরীরের প্রতিটি কণা দেশের সেবায় নিয়োজিত থাকবে।’
বুথফেরত জরিপ প্রত্যাখান ইন্ডিয়া জোটের
এদিকে মোদি ফের ক্ষমতায় আসছেন বলে যে জোর হাওয়া বইছে এর মধ্যেই বুথফেরত জরিপের ফলকে প্রত্যাখ্যান করেছে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া। তারা বলেছে, মোদির নিজস্ব সংবাদ চ্যানেলগুলো তার পক্ষেই এসব জরিপ করেছে। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, মোদির সংবাদ চ্যানেলের বুথফেরত জরিপের ফল দুই মাস আগেই তৈরি।
কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীও গতকাল দেশবাসীকে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘অপেক্ষা করুন, শেষ পর্যন্ত ইন্ডিয়া জোটই ক্ষমতায় আসবে।’ বিজেপি যাতে ভোট গণনায় কারচুপি করতে না পারে, সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে আগাম সতর্কও করে এসেছে। তার জবাবে গতকাল দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেছেন, ‘ভারতের ভোটগণনা খুবই বলিষ্ঠ একটি প্রক্রিয়া। দেশে মোট সাড়ে ১০ লাখ বুথ রয়েছে। ৩০-৩৫ লাখ পোলিং এজেন্ট থাকবেন বাইরে।
এ ছাড়া নজরদারি দল থাকবে। গণনা অফিসাররা থাকবেন। কোনো ভুল হতেই পারে না। সিসি ক্যামেরা থাকবে। মানুষের ভুল হতেই পারে। কিন্তু ভোটগণনায় কারচুপির কোনো সম্ভাবনা নেই। বিভিন্ন দল ভোটগণনা নিয়ে যে দাবি করেছিল, সব মেনে নেওয়া হয়েছে।’
মন্তব্য করুন