একটা সময় এমন ছিল যে, ঘরের কাজের বাইরে নারীদের ভূমিকা খুব একটা দেখাই যেত না। কিন্তু এখন নারীদের অর্জনের শেষ নেই। তেমন এক ভারতীয় নারী হচ্ছেন শিনা রানি। মাত্র ৫৭ বছর বয়সেই ‘মিসাইল কুইন’ খেতাব অর্জন করেছেন তিনি। ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন। মায়ের সঙ্গে মিলে সংগ্রাম করা সেই শিনা আজ ভারতের সবচেয়ে অত্যাধুনিক মিসাইল অগ্নি-৫’র পেছনের কারিগর।
গেল মার্চে এমআইআরভি প্রযুক্তিতে তৈরি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল, অগ্নি-৫ এর পরীক্ষা চালায় ভারত। ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) এই মিসাইলটি তৈরি করেছে। শিনা ডিআরডিও’র হায়দরাবাদভিত্তিক অ্যাডভান্সড সিস্টেমস ল্যাবরেটরি (এএসএল)’র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর। অগ্নি-৫ মিসাইল বানানো টিমের নেতৃত্ব দিয়েছেন শিনা।
তবে শুধু অগ্নি-৫’ই নয়, এই সিরিজের অন্য মিসাইল তৈরির পেছনেও শিনার হাত রয়েছে। অগ্নি-৫ ভারতের নিজস্ব তৈরি সবচেয়ে অত্যাধুনিক আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল। এই মিসাইল ৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম ভারতের এমন মিসাইল তৈরির চীন ও পাকিস্তানের নেতাদের ঘুম চলে গেছে।
শিনার টিমে আরও কয়েকজন নারী বিজ্ঞানী ছিলেন। তারা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে এই মিসাইল তৈরি করেছেন। শিনা জানান, তার মিসাইল কুইন হয়ে ওঠার পেছনে তিনি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের কাছ থেকে। শিনার স্বামীও ডিআরডিওতে কাজ করেন। ২০১৬ সালে সায়েন্টিস অব দ্য ইয়ার পুরস্কারসহ শিনার ঝুলিতে বেশ কয়েকটি পুরস্কার রয়েছে।
ডিআরডিওতে যোগ দেওয়ার আগে ইসরোর বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারে ৮ বছর কাজ করেছেন শিনা। ১৯৯৮ সালে পোখরান-২ পরমাণু পরীক্ষার পরের বছর ডিআরডিওতে যোগ দেন তিনি। তখন থেকেই অগ্নির বিভিন্ন ধরন নিয়ে কাজ করছিলেন ভারতীয় এই মিসাইল বিশেষজ্ঞ। মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারালেও মায়ের সমর্থনে এতটা পথ পাড়ি দিতে পেরেছেন।
ওই মিসাইল পরীক্ষা চালানোর পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ভারত না জানিয়েই এমন পরীক্ষা চালিয়েছে। চীন ও পাকিস্তানকে মোকাবিলা করতে ১৯৯০-র দশক থেকে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার মিসাইল তৈরি করে যাচ্ছে ভারত। ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো অগ্নি-৫ এর সফল পরীক্ষা চালানো হয়। ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য এই মিসাইল চীনের যে কোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম।
মন্তব্য করুন