ভারতের অরুণাচল প্রদেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৬০০ সামরিক ও পরিবহন বিমান। যার ধ্বংসাবশেষ ও নিখোঁজ পাইলটদের উদ্ধারে ২০০৯ সালে যৌথভাবে অনুসন্ধান শুরু করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি প্রদেশটির নতুন একটি সংগ্রহশালায় খুঁজে পাওয়া বিমানের ধ্বংসাবশেষ রাখা হয়েছে। হিমালয়ের পাদদেশের মনোরম শহর পাসিঘাটে সদ্য উদ্বোধন করা হয়েছে ‘দ্য হাম্প মিউজিয়াম’ নামের এ সংগ্রহশালা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের আসাম ও বাংলা থেকে কুনমিং এবং চুংকিং পর্যন্ত বিমান অভিযান চালানো হত। জাপানিরা ভারতীয় সীমান্তে অগ্রসর হওয়ায় উত্তর মিয়ানমার মধ্য দিয়ে চীনে পৌঁছনোর স্থল পথ বন্ধ যায়। সেই পরিস্থিতিতে ওই বিমান পথটি ‘লাইফ লাইন’ হয়ে ওঠে। এর উদ্দেশ্য ছিল কুনমিং ও চুংকিং এ মোতায়েন চীনা সৈন্যদের সাহায্য করা। এই মার্কিন সামরিক অভিযান শুরু হয়েছিল ১৯৪২ সালের এপ্রিল মাসে। এই আকাশপথ দিয়ে মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলো ৬ লাখ ৫০ হাজার টন বোমা সরবরাহ করেছিল। মিত্র পক্ষের বিজয়ের পেছনে এই এয়ার করিডরের অবদান ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বিমানচালকরা এই দুর্গম পথটির নাম দিয়েছিলেন ‘দ্য হাম্প’। পূর্ব হিমালয়ের বিপজ্জনক উচ্চতায় চলাচল করতে হত ওই বিমানগুলোকে। গত ১৪ বছরে উদ্ধারকারী দলগুলো দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে, কমপক্ষে ২০টি বিমান এবং বেশ কয়েকজন নিখোঁজ বিমানকর্মীর দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছে। সেখানে আবিষ্কৃত বস্তুর তালিকায় রয়েছে অক্সিজেন ট্যাংক, মেশিনগান, ফিউসেলেজ বিভাগসহ বিভিন্ন জিনিস। ধ্বংসাবশেষের মধ্যে মাথার খুলি, হাড়, জুতা এবং ঘড়ি পাওয়া গিয়েছে এবং মৃতদের শনাক্ত করতে ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। ‘দ্য হাম্প’ নামক অশান্ত এ পথটিতে অধিকাংশ সময়েই দিক নির্দেশনার কাজ করতেন তরুণ এবং সদ্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিমানচালকরা। নেভিগেশন সরঞ্জামগুলোর সাহায্যে বিমানগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল- বসন্তের বজ্রপাত, ঝোড়ো বাতাস, তুষারপাত এবং শিলাবৃষ্টি। এ পথে বিমান চালানো মার্কিন বিমানবাহিনীর বিমানচালক মেজর জেনারেল উইলিয়াম এইচ টুনার জানান, ‘হাম্প’-এর আবহাওয়া পরিবর্তন হত ‘মিনিটে মিনিটে’। উইলিয়াম এইচ টুনার জানিয়েছেন, নিয়ম না মেনেই বিমানগুলো যেভাবে ওড়ানো হতো, তাতে অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে পাহাড়ের গায়ে আছড়ে পড়ত সেগুলো। অনেক সময়য়েই বিমানচালকরা জানতেন না তাদের ৫০ মাইলের মধ্যে কী রয়েছে। শুধু একটি ঝড়েই নয়টি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ২৭ জন বিমানকর্মী ও যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। সাবেক এ মার্কিন পাইলট জানান, পুরো বিমানপথে মেঘের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়ে এমন ভয়ংকর অস্থিরতা তিনি বিশ্বের আর কোথাও দেখেননি।
মন্তব্য করুন