ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী জি-২০ সম্মেলন। তবে এবারের সম্মেলনে প্রথমদিনে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল যৌথ বিবৃতির ঘোষণা দেওয়া। যদিও তা নিয়ে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এবারের সম্মেলন থেকে শান্তির বার্তা দিতে চায় জি-২০। যদিও শান্তির বার্তা দিলেও ইউক্রেন যুদ্ধের নিন্দা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি জোটটি। সদস্য দেশগুলো জানিয়েছে, যুদ্ধের নিন্দা না জানালেও সব দেশ অন্যের ভূখণ্ড দখলের ব্যাপারে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
সম্মেলনে এবারের আয়োজক দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, প্রথম দিনের অধিবেশনে শান্তির বার্তা নিয়ে বিশ্বের সকল নেতারা একমত হয়েছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, বার্তার বিষয়ে সকলের একমত হওয়াকে সারপ্রাইজ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কেননা বিশ্বনেতারা ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছেন। তাদের একাংশ এ যুদ্ধের সমালোচনা করেছেন। আর অন্যদিকে আরেকটি অংশ অর্থনৈতিক পরিসর বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছেন। তবে এ বার্তা নিয়ে সদস্য দেশগুলো তাৎক্ষনিক কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি।
জোটের এ ঘোষণায় বলা হয়েছে, আমরা সমস্ত রাষ্ট্রকে আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাসহ আন্তর্জাতিক আইনের নীতিগুলিকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা ইউক্রেনে শান্তি ও নায্যতা প্রতিষ্ঠায় প্রাসঙ্গিক এবং গঠনমূলক সকল উদ্যেগকে স্বাগত জানায়।
জোটের এ বিবৃতিতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার ও ব্যবহারের হুমকিকে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সময় কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার শস্য খাদ্য ও সার রপ্তানির উদ্যোগের জন্য পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়। চলতি বছরের জুলাই মাসে রাশিয়া তাদের দাবি পূরণ না হওয়ার অভিযোগ করে চুক্তি বাতিল করে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গতকাল পর্যন্ত বিশ্বনেতারা ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যৌথ বিবৃতিতে সম্মত হবেন না বলে ধারণা ছিল সবার। তবে এবার তা নিয়ে বিশ্বনেতারা একমত হয়েছেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ভারতীয় কূটনীতিকরা বলছেন, এ বিষয়ে সমঝোতার জন্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
বিবিসির দাবি, যৌথ বিবৃতির বিষয়ে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। এ আলোচনায় ইউক্রেনের বিষয়ে বিবৃতির জায়গা শূন্য রয়েছে। এর আগে গত বছরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ সম্মেলন থেকে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল। তবে সেখানে ইউক্রেনের যুদ্ধের বিষয়ে রাশিয়া ও চীন আপত্তি জানিয়েছিল। যদিও এবারের বিবৃতির বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের ঐকমত্যের বিষয়ে প্রচেষ্টা চলছে।
সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, এটা আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ যে, আমরা এ সম্মেলন থেকে যৌথ বিবৃতি দিতে চলেছি। এ বিষয়ে আমাদের টিম কঠোর পরিশ্রম করেছে। সবার সহযোগিতার মাধ্যমে সম্মেলন থেকে যৌথ বিবৃতি আসতে চলেছে।
এর আগে গত ৫ ও ৫ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত আসিয়ান জোটের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখান থেকে কোনো যৌথ বিবৃতি আসেনি। যদিও এ সম্মেলনে মিয়ানমার সংকট প্রাধান্য পেয়েছে। তবে তা নিয়ে সদস্যদের মধ্যে বিরোধ হওয়ায় কোনো ফলাফল আসেনি। সম্মেলনে আসিয়ানের বর্তমান সভাপতি ও স্বাগতিক ইন্দোনেশিয়া জানায়, মিয়ানমার সমস্যা সমাধানে জোটের প্রস্তাবিত পাঁচ দফা শান্তি পরিকল্পনায় অগ্রগতি যৎসামান্য।
এরও আগে গত ২২-২৪ আগস্ট জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেখান থেকেও কোনো যৌথ বিবৃতি পায়নি বিশ্ব। এ সম্মেলনে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মূলত বৈশ্বিক বিভাজনের বিষয়টি আরও সামনে এসেছে। সেখানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব, অন্যদিকে রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে চীন।
মন্তব্য করুন