পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারত ছাড়ার নির্দেশের প্রেক্ষিতে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হলো অটারি সীমান্ত। সন্তানদের নিয়ে স্বামীর কাছে ফেরার পথে সীমান্তেই আটকে গেলেন ভারতের উত্তর প্রদেশের মিরাটের বাসিন্দা সানা।
রোববার (২৭ এপ্রিল) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০ বছর বয়সী সানা ২০২০ সালে পাকিস্তানের করাচির এক চিকিৎসক বিলালের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সম্প্রতি তিনি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ভারতের মিরাটে আসেন। তবে, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে পাকিস্তান-সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের দ্রুত দেশত্যাগের নির্দেশ দেয়।
এই নির্দেশের পর, সানা তার তিন বছর বয়সী ছেলে ও এক বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) অটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে ফিরতে রওনা দেন। কিন্তু সীমান্তে পৌঁছানোর পর এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন তিনি। কারণ, সানার নিজের পাসপোর্ট ভারতীয় হলেও তার সন্তানদের পাসপোর্ট পাকিস্তানি। ফলে সন্তানদের ছেড়ে দিতে বলা হলেও সানাকে ভারতে ফিরে যেতে বলা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন সানা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার সন্তানরা এখানে থাকতে পারবে না, আবার আমি ওদের নিয়ে পাকিস্তানেও যেতে পারছি না। তিনি জানান, তার স্বামী বিলালও সীমান্তে এসে স্ত্রী-সন্তানদের নিতে অপেক্ষা করছিলেন।
সানা এবং তার পরিবার সীমান্তের কর্মকর্তাদের জানান, শিশুরা মায়ের ছাড়া থাকতে পারবে না। তবে কর্মকর্তারা তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেন এবং জানান, নতুন সরকারি নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সানা আরও জানান, বিয়ের পর এটি তার দ্বিতীয় ভারত সফর। তিনি সরকারকে অনুরোধ করে বলেন, পেহেলগামের হামলাকারীদের কঠোরতম শাস্তি দিন, কিন্তু আমাদের মতো নিরীহ পরিবারগুলোর মানবিক পরিস্থিতির দিকে দয়া করে নজর দিন। আমাকে ও আমার সন্তানদের পাকিস্তান যেতে দিন।
প্রসঙ্গত, গত দুই দিনে অটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ২৫০ জনের বেশি পাকিস্তানি নাগরিক ভারত ছেড়েছেন।
ভারত সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসা, চলচ্চিত্র, সাংবাদিকতা, ট্রানজিট, সম্মেলন, পর্বতারোহন, শিক্ষার্থী, দর্শনার্থী, গ্রুপ ট্যুরিস্ট, তীর্থযাত্রীসহ ১২ ধরনের স্বল্পমেয়াদি ভিসাধারীদের ২৭ এপ্রিলের মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে। এছাড়া সার্ক ভিসাধারীদের জন্য সময়সীমা ছিল শনিবার এবং চিকিৎসা ভিসাধারীদের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ২৯ এপ্রিল।
মন্তব্য করুন