ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে মঙ্গলবার ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। মূলত পর্যটকদের লক্ষ্য করেই এই হামলা চালানো হয়, যা প্রায় দুই দশকের মধ্যে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। পহেলগাম জেলার মনোরম হিমালয় অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনিরের সাম্প্রতিক এক বক্তব্য আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে। তার ওই বক্তব্যের সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে মঙ্গলবারের সন্ত্রাসী হামলার সম্পর্ক খুঁজছেন কোনো কোনো ভারতীয় বিশ্লেষক।
পাকিস্তান সেনাপ্রধানের মন্তব্য
১৬ এপ্রিল ইসলামাবাদে প্রবাসী পাকিস্তানিদের এক সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে জেনারেল মুনির কাশ্মীর সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট, কাশ্মীর আমাদের ঘাড়ের শিরা ছিল, এটি আমাদের ঘাড়ের শিরা হবে, আমরা এটি ভুলব না। আমরা আমাদের কাশ্মীরি ভাইদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে তাদের ত্যাগ করব না।’
প্রবাসী পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা দেশের রাষ্ট্রদূত, আপনাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, আপনারা ‘উচ্চতর আদর্শ ও সংস্কৃতির’ অন্তর্ভুক্ত। আপনাদের অবশ্যই আপনাদের সন্তানদের কাছে পাকিস্তানের গল্প বলা উচিত। আমাদের পূর্বপুরুষরা ভাবতেন যে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা হিন্দুদের থেকে আলাদা। আমাদের ধর্ম, আমাদের রীতিনীতি, ঐতিহ্য, চিন্তাভাবনা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা সবই তাদের থেকে আলাদা। এটাই ছিল দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তি।’
পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা
মঙ্গলবার বিকেলে পহেলগামের বৈসরান উপত্যকার একটি প্রধান পর্যটনকেন্দ্রে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। উপত্যকাটি একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত, যাকে অনেকে ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে অবিহিত করেন। পর্যটকদের লক্ষ্য করে চালানো ওই হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত এবং প্রায় ১৭ জন আহত হন। নিহতদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক রয়েছে বলে জানা গেছে।
হামলায় বেঁচে যাওয়া পর্যটকদের মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ঘাসের চাদরের ওপর অনেকগুলো মৃতদেহ পড়ে আছে, মানুষ কাঁদছে এবং সাহায্যের জন্য আবেদন করছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ২০০৮ সালের মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলায় ১৬০ জনেরও বেশি লোক নিহত হওয়ার পর এটি ছিল ভারতে বেসামরিক নাগরিকদের উপর সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ। হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে বুধবার সকালেই ভারতে ফিরে আসেন।
সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দায় স্বীকার
ভারতীয় কর্মকর্তাদের দাবি, পাকিস্তান-ভিত্তিক নিষিদ্ধ লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর একটি ছায়া গোষ্ঠী রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট এক সোশ্যাল মিডিয়া বার্তায় এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, ৮৫,০০০-এরও বেশি ‘বহিরাগত’ এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করায় তারা ক্ষুব্ধ। বহিরাগত বসতির কারণে এই অঞ্চলের জনসংখ্যাগত পরিবর্তন ঘটাচ্ছে যা তারা মানবে না।
মন্তব্য করুন