ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান হাজার কোটি টাকার একাধিক রেল প্রকল্প স্থগিত করেছে বলে জানা গেছে। এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সংযোগ বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকায় ভারত বিকল্প রুট নিয়ে ভাবছে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত বাংলাদেশের একাধিক রেলওয়ে প্রকল্পে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি রুপির অর্থায়ন স্থগিত করেছে। এসব প্রকল্প হলো আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আগরতলা ও কলকাতার মধ্যে ভ্রমণের সময় ৩৬ ঘণ্টা থেকে কমে ১২ ঘণ্টা হওয়ার কথা ছিল।
এছাড়া খুলনা-মংলা রেল সংযোগ এবং ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর প্রকল্পেও ভারতের অর্থায়নের কথা ছিল। এরমধ্যে ৬৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ খুলনা থেকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলা পর্যন্ত নির্মাণাধীন ছিল। এছাড়া ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর প্রকল্পটি ২০২৭ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে ব্যয়বৃদ্ধি ও নকশা জটিলতায় পিছিয়ে পড়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতি সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল নিয়ে মন্তব্য করেন এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার আহ্বান জানান। এর পর ভারত বাংলাদেশকে ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা স্থগিত করে এবং বাংলাদেশ ভারত থেকে সুতা আমদানি বন্ধ করে দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নত করার জন্য ভারত রেল সংযোগ প্রকল্পগুলোতে এগিয়ে নিয়ে আসছে। গত কয়েক বছরে দুই দেশের মধ্যে যে সহযোগিতার অগ্রগতি হয়েছে তা বর্তমান অস্থিতিশীলতা এবং ভারত-বিরোধী বক্তব্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে এই অঞ্চলে চীনা সম্প্রসারণের আহ্বান।
ভারতের বিকল্প কী? উত্তর-পূর্ব ভারতে সংযোগ রক্ষায় বিকল্প রুট তৈরি এখন ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত সড়ক ও রেল যোগাযোগ নির্ভর করে ‘চিকেনস নেক’ বা ‘শিলিগুড়ি করিডর’ নামক ২২ কিমি প্রশস্ত সংকীর্ণ করিডরের উপর। এ এলাকাটি যা কৌশলগতভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল।
এই পরিস্থিতিতে নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে নতুন রেলপথ গড়ে তোলা হতে পারে একটি সমাধান, যদিও সেখানে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবুও, যদি বাংলাদেশের পরিস্থিতি অচিরেই স্বাভাবিক না হয়, তবে ভারতের নীতিগত পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারত ও বাংলাদেশ এখনো এই পরিস্থিতি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে দুই দেশের কর্মকর্তারাই স্বীকার করছেন—সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতি মন্থর হয়েছে। বিশেষ করে রেল প্রকল্পগুলোর মতো যেসব প্রকল্প ব্যাপক সমন্বয়ের দাবি রাখে, সেখানে কার্যকর অগ্রগতি কঠিন হয়ে পড়ছে।
সূত্রের তথ্যমতে, ভারত কর্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন বিষয়ে উদ্বেগ প্রশমিত করার জন্য বাংলাদেশ খুব বেশি প্রচেষ্টা করেনি। এই ঘটনাবলীর সাথে পরিচিত সূত্রগুলোর মতে, আপাতত প্রকল্পগুলো স্থগিত রাখা ছাড়া বিকল্প নেই বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দাবি করছে যে তারা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করেছে। কিন্তু এসব ঘটনা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আস্থা অর্জন করতে পারেনি।
মন্তব্য করুন