আধুনিকতার মাঝেও ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান দেখিয়েছে ভারত। দেশটিতে রথযাত্রার জন্য কয়েক ঘণ্টা বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আধুনিকতার মাঝেও ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান রেখে দক্ষিণ ভারতে রথযাত্রার জন্য কেরালা রাজ্যের রাজধানী তিরুবনন্তপুরমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল) শহরের বিখ্যাত শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের বার্ষিক ‘পাইনকুনি উৎসবের’ সমাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত হয় ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রা। এতে দেবমূর্তি বহনকারী সুসজ্জিত কাঠের রথ বিমানবন্দরের রানওয়ে অতিক্রম করে। ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রুটের মধ্যেই পড়ে বিমানবন্দরের রানওয়ে, যেখানে সাধারণত প্রতিদিন ৯০টিরও বেশি উড়োজাহাজ ওঠানামা করে।
শোভাযাত্রার অংশ হিসেবে হাতিও রানওয়ে দিয়ে হেঁটে যায়, যা ভারতের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে খুবই সাধারণ চিত্র। শোভাযাত্রাটি মন্দির থেকে শুরু হয়ে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শঙ্খুমুখম সমুদ্র সৈকতে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে পুরোহিতরা দেবমূর্তির স্নান অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। পরে আবার রানওয়ে অতিক্রম করে মন্দিরে ফেরে মূর্তিগুলো।
১৯৩২ সালে থেকে এই ঐতিহ্য অনুসরণ করা হচ্ছে। এ সময়ে ত্রাভাঙ্কোর রাজপরিবার এই বিমানবন্দর নির্মাণ করে। আজও শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন রাজপরিবারের প্রধান। বর্তমানে বিমানবন্দরটি পরিচালনা করছে আদানি গ্রুপের অধীনস্থ আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিংস লিমিটেড।
বিবিসি জানিয়েছে, এই বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য বিমানবন্দরের সব কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকে — এমন দৃষ্টান্ত বিশ্বে খুবই বিরল। ইন্দোনেশিয়ার বালির ‘নিউ ইয়ার নিপি’ এবং ইসরায়েলের ‘ইয়ম কিপুর’ অনুষ্ঠানেও বিমানবন্দর বন্ধ থাকে। তবে এসময় সরকারি ছুটির কারণে বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু রানওয়ে ব্যবহার করে শোভাযাত্রা সেটি কেবলমাত্র তিরুবনন্তপুরমেই দেখা যায়।
মন্দিরের কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা মহেশ বালাচন্দ্রন বলেন, শোভাযাত্রাটি স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে শুরু হয়ে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলে। এটি অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত ও সুরক্ষিত পরিবেশে সম্পন্ন হয়।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা দুই মাস আগেই বিভিন্ন এয়ারলাইন্সকে ফ্লাইট সূচি পরিবর্তনের বিষয়ে অবহিত করেছে। ওই দিন ১০টি ফ্লাইট পুনঃনির্ধারণ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু নির্বাচিত রাজপরিবারের সদস্য, পুরোহিত, কর্মকর্তারা ও অনুমোদিত ভক্তরা বিশেষ পাস ও নিরাপত্তা যাচাইয়ের মাধ্যমে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারেন। কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী রানওয়েটি ব্যারিকেড করে এবং পুরো শোভাযাত্রা নজরদারির আওতায় পরিচালনা করে।
মন্তব্য করুন