কখনও শিস, কখনও কিচিরমিচির, আবার কখনও অন্য রকম কিছু সুর। তবে পাখির নয়, এ সুর মানুষেরই। এমনও এক গ্রাম আছে যেখানে পরস্পর পরস্পরকে ডাকেন সুরে সুরে। মায়েরা প্রতিটি সন্তানের জন্য তৈরি করেন আলাদা আলাদা সুর। সেই সুরেই বাকিরা তাদের ডাকে সারাটা জীবন। তাই প্রত্যেকের রয়েছে নিজের একটি সুর, এটাই তাদের পরিচয়।
পাহাড়ি এই গ্রামে মানববসতি খুবই সীমিত। মূল ভূখণ্ড থেকে অনেকটাই আলাদা এই গ্রামের নাম কংথং। গ্রামটির অবস্থান ভারতের মেঘালয় রাজ্যে। এখানকার মানুষজন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে বিচিত্র সব সুরের মাধ্যমে।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গ্রামের বাসিন্দাদের অক্ষরভিত্তিক নামও রয়েছে। তবে নিজেদের মধ্যে সেই নামের ব্যবহার খুবই কম। সন্তানদের আলাদা আলাদা সুরে ডাকেন মা। খাবার খেতে সন্তানদের ডাকতে হলে, সুরের আশ্রয় নেন মায়েরা। আবার সুরে সুরেই জবাবও দেয় সন্তানেরা। এভাবেই সুরে সুরে চলে কথাবার্তা। এটাই এই গ্রামের রীতি।
ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখাতেই মূলত সুরে সুরে ডাকেন মায়েরা। তবে রেগে গেলে কিন্তু পোশাকি নামেই ডাকেন। আবার জঙ্গলে কাজ করার সময় গ্রামের বাসিন্দারা একে-অপরের সঙ্গে সুরে সুরে কথা বলেন। আধুনিক পৃথিবী থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন কংথং। ২০০০ সালে গ্রামটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ লাগে। রাস্তা তৈরি হয় আরও তিন বছর পর অর্থাৎ ২০১৩ সালে।
কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় আস্তে আস্তে এই গ্রামের সুর ও গানে আসছে পরিবর্তন। কিন্তু নিজের ঐতিহ্য ধরে রাখছেন গ্রামের বাসিন্দারা। তাদেরই একজনের ভাষায়, আমরা ছোটকাল থেকেই এভাবে গাইতাম, শব্দ তৈরি করতাম। আমাদের বাবা-মা এই সুর শিখিয়েছেন। আমরা আমাদের সন্তানদের মাঝেও এখন সেই সুর ছড়িয়ে দিচ্ছি।
অনন্য এমন জীবনযাত্রার জন্য পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে কংথং গ্রাম। মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামের অবস্থান। মাতৃতান্ত্রিক এই গ্রামে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মায়েরা। কারণ মায়েরা সন্তানের প্রতিপালন করেন, আবার সংসারও সামলান। তাই মায়ের সুরেই পরিচিতি পায় সন্তানরা।
মন্তব্য করুন