ভারতের কাছে কিছু ভয়ংকর অস্ত্র অস্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো টি-৯০ যুদ্ধ ট্যাংক, যা শত্রুদের কয়েক মিনিটের মধ্যে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। সম্প্রতি সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনী টি-৯০ ট্যাংকসহ মর্টার ও ফায়ার আর্মসসহ মাসব্যাপী লাইভ ফায়ারিং অনুশীলন সম্পন্ন করেছে। এ মহড়াটি সিকিম ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরের সুরক্ষায় পরিচালিত হয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জারি করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধ প্রস্তুতি বাড়ানো এবং বিভিন্ন অপারেশনাল পরিস্থিতিতে সাঁজোয়া যুদ্ধ কৌশল যাচাই করা।
টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাংকের মূল বৈশিষ্ট্য
- ওজন: ৪৬.৫ টন - ক্রু: ৩ জন - দৈর্ঘ্য: ৯.৫৩ মিটার - উচ্চতা: ২.৮৬ মিটার - প্রস্থ: ৩.৭৮ মিটার - সর্বোচ্চ গতি: ৬০ কিমি/ঘণ্টা - ইঞ্জিন: ১০০০ এইচপি - প্রধান তোপ: ১২৫ মিমি - তোপের ক্ষমতা: ৮ রাউন্ড/মিনিট - গুলি: ৪৩ (গাইডেড মিসাইল/হিট/এইচই/এফএসএপিডিএস) - কো-অ্যাক্সিয়াল মেশিন গান: ৭.৬২ মিমি - অ্যান্টি-এয়ারক্র্যাফট গান: ১২.৭ মিমি
এই ট্যাংক কেন এত ভয়ংকর
টি-৯০ ট্যাংক, যা দেশটির প্রধান যুদ্ধ ট্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম, উন্নত ফায়ার কন্ট্রোল, উচ্চ গতি, উন্নত সুরক্ষা এবং থার্মাল ইমেজিং প্রযুক্তির কারণে রাতে ও প্রতিকূল আবহাওয়ায়ও কার্যকরী।
বর্তমানে ভারত টি-৯০ ট্যাংক ব্যবহার করে। এটি রাশিয়ার টি-সিরিজের ভার্সন। প্রযুক্তি হস্তান্তরের চুক্তির আওতায়, এই ট্যাংকগুলো ভারতে তামিলনাড়ুর হেভি ভেহিকল্স ফ্যাক্টরিতে তৈরি হচ্ছে এবং 'ভীষ্ম' নামে পরিচিত। এই ট্যাংকে স্ব-সুরক্ষা ব্যবস্থা, ফ্রান্সের থ্যালেস ও বেলারুশের পেলেংয়ের ক্যাথরিন থার্মাল ইমেজার লাগানো হয়েছে, যা শত্রুর আক্রমণের বিরুদ্ধে ট্যাংককে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেয়।
সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, লাদাখ, সিকিম ও অরুণাচলের ঠান্ডা ও কঠিন আবহাওয়ার জন্য টি-৯০ ট্যাংক বিশেষভাবে উপযোগী। এতে ব্যবহৃত বিশেষ জ্বালানি সাব-জিরো তাপমাত্রায় জমে না, ফলে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও ট্যাংক কাজ করতে পারে। ২০০১ সালে রাশিয়া থেকে প্রথমবার ৩১০টি টি-৯০ ট্যাংক কেনার পর, এর মধ্যে ১২৪টি পূর্ণ প্রস্তুত এবং বাকি ১৮৬টি ভারতে তৈরি হয়েছে। পূর্বে ভারত টি-৭২ ট্যাংক ব্যবহার করত, তবে পাকিস্তান টি-৮০ ট্যাংক ব্যবহার করায় ভারতের উন্নতমানের ট্যাংকের প্রয়োজন দেখা দেয়।
২০০৪ সালে ভারতে নির্মিত টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাংকের প্রথম ব্যাচ নিয়ে চালু হয় এবং তারপর থেকে নিয়মিত উৎপাদন হচ্ছে। এই ট্যাংকের অনেকবার আধুনিকীকরণ হয়েছে, যাতে এর শক্তি, অস্ত্রক্ষমতা এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও বাড়ানো যায়। এতে অত্যাধুনিক থার্মাল ইমেজিং, ইনফ্রা ক্যামেরা ও ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র রোধক ব্যবস্থা লাগানো হয়েছে।
বর্তমান প্রজন্মের টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাংককে বিশ্বের অন্যতম সেরা যুদ্ধ ট্যাংক হিসেবে অভিহিত করা হয়। বিশেষ করে লাদাখের মত দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে, যেখানে চীনের টাইপ-১৫ ট্যাংকের তুলনায় টি-৯০ ট্যাংকের ধারেকাছে কেউ নেই, এ কারণে ভারতের সেনাবাহিনীর এই ট্যাংক শত্রুর কাছে ভয়াবহ প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত।
তথ্যসূত্র: এনএআই, এপিবি
মন্তব্য করুন