বৃহস্পতিবার দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ৫০ বছর বয়সী রেখা গুপ্তা। দিল্লির ঐতিহাসিক রামলীলা ময়দানে আড়ম্বরপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে শপথ নেন তিনি। এর মাধ্যমে রেখা হলেন রাজ্যের নবম মুখ্যমন্ত্রী। তিনি দিল্লির চতুর্থ নারী মুখ্যমন্ত্রী এবং সুষমা স্বরাজের পর বিজেপি-র তরফে দিল্লির দ্বিতীয় নারী মুখ্যমন্ত্রী।
রেখা গুপ্তা দিল্লিতে খুব পরিচিত রাজনীতিক নন। দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনে শালিমারবাগ থেকে প্রথমবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে পরপর দুই বার তিনি হেরেছেন। তবুও ২৭ বছর পর দিল্লির ক্ষমতায় ফিরে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এই নারীকেই বেছে নিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
রেখা গুপ্তা ছাত্র রাজনীতি করেছেন। দিল্লিতে বিজেপি ও কংগ্রেসের অনেকেই এভাবে ছাত্র রাজনীতি থেকে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে রাজনীতিতে এসেছেন। অরুণ জেটলি, অজয় মাকেনও এভাবেই এসেছেন। সেই তালিকায় রেখা গুপ্তার নামও যোগ হলো।
কেন রেখাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলো?
রেখা গুপ্তা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হবেন, এটা কেউ আগে ধারণা করতে পারেননি। সাধারণত, নরেন্দ্র মোদী এরকম ক্ষেত্রে চমক দিতে ভালোবাসেন। কিছুদিন আগে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের ক্ষেত্রেও দিয়েছেন। এবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও দিলেন। কিন্তু তাকে বেছে নেয়ার পিছনেও একটা রাজনৈতিক সমীকরণ রয়েছে।
বিজেপি কর্মী সলিল নন্দী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘রেখা গুপ্তাকে মুখ্যমন্ত্রী করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় কাজ করছে। প্রথমত, তিনি নারী, দ্বিতীয়ত, তিনি সঙ্ঘ পরিবারের ঘরের মানুষ, তৃতীয়ত, তিনি দিল্লিতে যাদের বানিয়া বলে, সেই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মানুষ। দিল্লিতে সেই জনসঙ্ঘের সময় থেকে বানিয়ারা জনসঙ্ঘ ও বিজেপি-র কট্টর সমর্থক। আর রেখা গুপ্তা দল ও নেতৃত্বের সব কথা হুবহু মেনে শাসন চালাবেন।’
আম আদমি পার্টির নেতা অনুপ ঠাকুরের মতে, ‘রেখা গুপ্তার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো আরএসএসের সমর্থন। মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন বলে যে কয়জন নেতার নাম শোনা যাচ্ছিল, তারা কেউ সেভাবে আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু রেখা প্রথম থেকেই সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের ক্ষেত্রেও আরএসএসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নেতারাই মুখ্যমন্ত্রী হতে পেরেছেন।’
দিল্লিতে রেখাকে নিয়ে চারজন নারী মুখ্যমন্ত্রী হলেন। দিল্লি রাজ্য হওয়ার পর যতজন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে সফল মুখ্যমন্ত্রী মনে করা হয় শীলা দীক্ষিতকে। ১৫ বছর তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তার আমলেই দিল্লির চেহারা বদলে যায়।
মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে অরবিন্দ কেজরিওয়াল নারীদের পছন্দের মানুষ ছিলেন। কারণ, তিনি দিল্লিতে মেয়েদের জন্য বাসে ভ্রমণ ফ্রি করে দিয়েছেন। তিনি সরকারি স্কুলের চেহারা বদল করে এবং মহল্লা ক্লিনিক করে, বিদ্যুতের মাসুল কম করে ও বিনা পয়সায় পানি দিয়ে গরিব, মধ্যবিত্তদের অর্থ সাশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন।
কেজরিওয়াল যখন মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়েন, তখন আতিশিকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন। বিজেপি ক্ষমতায় এসে তাই একজন নারীকেই মুখ্যমন্ত্রী করতে চেয়েছে।
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তার মতে, ‘নরেন্দ্র মোদি একটা কথা ভালোভাবেই জানেন, দিল্লির মতো রাজ্যে নারী ভোটারদের পাশে পেতে একজন নারী মুখ্যমন্ত্রী সহায়ক হতে পারবেন। এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক খেলা। তাছাড়া রেখা গুপ্তাকে দৃঢ় চরিত্রের বলে মনে করা হয়। ফলে তিনি কড়াভাবেই রাজ্যের হাল ধরতে পারবেন বলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মনে হয়েছে।’
অনেকে মনে করছেন, দিল্লিতে অনেক ক্ষমতাই কেন্দ্রের হাতে। এখানে রাজ্য সরকারের হাতে ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। এই অবস্থায় রেখা গুপ্তা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কথা শুনে তাদের পরিকল্পনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন বলেই মনে করছেন নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ। এজন্য এই নারী নেত্রীর উপরেই ভরসা রাখতে চাইছেন তারা।
সূত্র : ডয়চে ভেলে
মন্তব্য করুন