ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত-পায়ে শিকল পরা অবস্থায় কার্টুন প্রকাশের পর তামিলনাড়ুর জনপ্রিয় সাপ্তাহিক সংবাদমাধ্যম ‘ভিকাতান’-এর ওয়েবসাইট ব্লক করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে, বন্ধ হওয়া সংবাদমাধ্যমটি দাবি করেছে, ভারতের কেন্দ্র সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের ওয়েবসাইট ব্লক করেছে, কারণ তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে মোদির নীরবতা তুলে ধরতে কার্টুনটি প্রকাশ করেছিল। কার্টুনটিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায়।
ভিকাতান সংবাদমাধ্যম জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে আটক ভারতীয় অভিবাসীদের হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি পরিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় মোদি নীরব ছিলেন, সেটি তুলে ধরতেই কার্টুনটি করা হয়েছিল।
এই ঘটনার পর তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন বিজেপির কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করা গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়। এটি বিজেপির ফ্যাসিবাদী আচরণের আরেকটি প্রমাণ। একইসঙ্গে, স্টালিন দ্রুত ওয়েবসাইটটি আনব্লক করার দাবি জানান।
অন্যদিকে, বিজেপি ভিকাতান পত্রিকাটির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করার অভিযোগ এনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে।
তামিলনাড়ু বিজেপির সভাপতি কে আন্নামালাই অভিযোগ করেন, এই কার্টুনটি প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক সফরের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এটি ডিএমকের মুখপত্র হিসেবে কাজ করছে এবং রাজ্য সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে এ ধরনের প্রচার চালাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া ও কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।
পত্রিকাটি এক বিবৃতিতে জানায়, বেশ কয়েকজন পাঠক জানিয়েছেন, তারা ওয়েবসাইটটি অ্যাক্সেস করতে পারছেন না। তবে সরকারিভাবে এখনো কোনো ঘোষণা আসেনি।
ভিকাতান আরও জানায়, প্রায় এক শতাব্দী ধরে আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়ে আছি। কেন আমাদের ওয়েবসাইটটি ব্লক করা হয়েছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।
অপরদিকে বিজেপির নেতা ভিনোজ পি সেলভাম ভিকাতানের ওয়েবসাইট ব্লকের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকতা দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদি যখন বিশ্বজুড়ে প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য প্রশংসিত হচ্ছেন, তখন এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার করা উচিত নয়।
এই ঘটনা নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিজেপি যেখানে এটিকে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে, সেখানে বিরোধীরা বলছে, গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করতে সরকার ক্রমাগত চেষ্টা করছে।
এখন দেখার বিষয়, সাপ্তাহিক ভিকাতানের ওয়েবসাইট পুনরায় চালু হয় কি না এবং কেন্দ্র সরকার এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয় কি না।
মন্তব্য করুন