বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ফের কূটনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গত বুধবার ভারতে অবস্থান করে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাজানো এবং উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ভারপ্রাপ্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পবন বাধেকে তলব করে ঢাকা। ফলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
শুক্রবার ( ০৭ জানুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। বুধবার তিনি অনলাইনে এক বক্তৃতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘মৃতদেহের উপর দিয়ে হেঁটে’ ক্ষমতা দখলের অভিযোগ করেন। এর আগে ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশারকে তলব করে গভীর উদ্বেগ, হতাশা এবং গুরুতর আপত্তি জানায়। এছাড়া শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য দুই দেশের মধ্যকার সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়ক নয় বলেও জানানো হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতে অবস্থানকালে শেখ হাসিনাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে মিথ্যা ও উসকানিমূলক বিবৃতি থেকে বিরত রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার মনোভাব নিয়ে অবিলম্বে এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিতেও আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আগে গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন দাবি করে বলেছেন, ভারত থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতির কারণে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর এবং আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এ ধরনের বক্তব্য না দেন, তাকে বিরত রাখার জন্য ভারতকে লিখিতভাবে বলা হয়েছে এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
রাজধানীর ৩২ নম্বরে আজ ও গতকালের ভাঙচুরের ঘটনা তুলে ধরে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রথম কয়েক দিন একটু আইনশৃঙ্খলা সমস্যার পর আস্তে আস্তে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। আপনারা একটা জিনিস খেয়াল করবেন, এ ধরনের ঘটনা তো তখনও ঘটতে পারতে। ঘটেনি কিন্তু।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে থেকে যেসব বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন, সেটাকে ছাত্র-জনতা ভালোভাবে নেয়নি। তিনি অবিরাম প্রোভোক (উসকানি) করছেন। তারই ফলে এ ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের বিশ্বাস। যদি তিনি এ ধরনের ঘটনা থেকে বিরত থাকতেন, তাহলে এ রকম ঘটনা হয়তো ঘটত না বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আপনারা জানেন যে সেনাবাহিনীও সেখানে উপস্থিত হয়েছিলে এবং তারা কনটেইন করতে পেরেছিল, যাতে বাড়াবাড়ি এর চেয়ে বেশি কিছু না হয়। তারা যখন শুরু হয়ে গেছে, তখন সম্পূর্ণ থামাতে পারেনি। কিন্তু এটা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে বা আরও যাতে ক্ষতি না হয়, এটা তারা কনটেইন করতে পেরেছিল।
শেখ হাসিনা যাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এ ধরনের বক্তব্য না দেন, তাকে বিরত রাখার জন্য ভারতকে লিখিতভাবে বলা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তৌহিদ হোসেন বলেন, এখনো আমরা জবাব পাইনি। আজ আবারও তাদের আমরা গত কয়েক দিনের পরিস্থিতির জন্য প্রোটেস্ট নোট দিয়েছি। হাইকমিশনার এখন নেই, তাই অ্যাকটিং হাইকমিশনারকে ডেকে এ ধরনের প্রোভোক করার প্র্যাকটিস বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছি।
মন্তব্য করুন