ভারতের দিল্লি বিধানসভা নির্বচনের প্রচার শেষ হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ৭০ আসনবিশিষ্ট বিধানসভার ভোট হবে। এবার প্রতিটি আসনে মুখোমুখি লড়ছে আম আদমি পার্টি (আপ), ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন এনডিএ এবং কংগ্রেস।
একদিনে ভোট হলেও ফলাফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে তিন দিন। তফসিল অনুযায়ী ৮ ফেব্রুয়ারি হবে ভোট গণনা। এরপরই জানা যাবে, দিল্লির বিধানসভার মসনদ কার দখলে যাচ্ছে। তবে এ লড়াইয়ে আম আদমি পার্টি ও বিজেপির মধ্যেই মূল লড়াই হচ্ছে। দুই দলের পূর্বাপর রাজনৈতিক মতবিরোধ ছড়াচ্ছে উত্তেজনা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি, আনন্দবাজার ও ইটিভি ভারতের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র জয় নিশ্চিত করার জন্য একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ৫ ফেব্রুয়ারি বিজেপি, আম আদমি পার্টি (এএপি) এবং কংগ্রেস দিল্লি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে। দীর্ঘ বছর পর প্রথমবারের মতো তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তবে আপাতদৃষ্টিতে আপ কিছুটা ব্যবধানে এগিয়ে। অনেকে বলছেন, অরবিন্দ কেজরিওয়াল আবারও জয়ী হতে পারেন। অপরদিকে মোদির জনপ্রিয়তা বিজেপির প্রার্থীকে এগিয়ে রাখতে পারে। বিশেষ করে, কুম্ভমেলাকেন্দ্রিক প্রচার ভোটারদের ধর্মীয় আবেগতাড়িত করতে পারে। বিজেপি বিষয়টি ভালো করে জানে বলেই ভোটের দিন ৫ ফেব্রুয়ারিতে কুম্ভে মোদির পুণ্যস্নানের দিন বেছে নেওয়া হয়েছে, এমনটি বলছেন বিরোধীরা।
দিল্লির জনসংখ্যা ৩ কোটি ৩০ লাখ এবং ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ৫৬ লাখ। সংখ্যাটি বিশাল। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বাস করে। উদাহরণস্বরূপ, করোলবাগে বেশিরভাগ তামিল বাস করে; চিত্তরঞ্জন পার্কে পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের সংখ্যা বেশি, যেখানে পূর্ব দিল্লিতে বেশিরভাগ উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা।
রাজধানীর জনসংখ্যার মধ্যে ভাসমান অভিবাসীদের জনসংখ্যাও অন্তর্ভুক্ত। যারা এখানে বাস করে কিন্তু অন্যত্র ভোট দেয়। তবে, তাদের রাজধানীতে একটি অংশীদারত্ব রয়েছে। তারা দেশের অন্যান্য অংশে তাদের স্বজনদের কাছে রাজধানী সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে। তারাই স্থানীয় ভোটারদের নিজস্ব রাজনৈতিক মতবাদে প্রভাবিত করতে পারেন।
এক বিশ্লেষণ বলছে, এবারও একক বৃহত্তম দল হিসেবে আপ আবির্ভূত হতে পারে। তার পরে বিজেপি এবং কংগ্রেস ভোট পাবে। এ পূর্বাভাস ভুল প্রমাণে কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয়ই নির্বাচনে জয়ের জন্য আরও দৃঢ় সংকল্প দেখাচ্ছে। বিজেপি প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে, সংসদ নির্বাচনে যারা দলকে ভোট দিয়েছে তারা বিধানসভার নির্বাচনেও তাদের পাশে থাকবে।
এ ছাড়া দুর্নীতির দায়ে আম আদমি পার্টি নাস্তানাবুদ। এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। কারণ, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের ঢেউয়ে ভেসে রাজনৈতিক দল গঠন করে দিল্লি দখল করা কেজরিওয়ালই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। আবগারি (মদ) মামলায় সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হয়ে কারাবাস ভোগ করেন। তার দলের অনেকের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে ভোটাররা আম আদমি থেকে মুখ ফেরালে পোয়াভারো হবে বিজেপির।
অপরদিকে কংগ্রেস মুসলিম ও দলিতদের টার্গেট করছে। সংসদ নির্বাচনেও দলটি তাদের সমর্থন পেয়েছিল। কংগ্রেস চাইছে, সেই সমর্থন কাজে লাগিয়ে দিল্লিতে তাদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা। যদিও এটি অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। কারণ, কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি দৃশ্যত পক্ষপাতদুষ্ট না হওয়ার কারণে সংখ্যালঘু এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও শ্রমিক শ্রেণির কাছে জনপ্রিয় আম আদমি পার্টি। এ ছাড়া কেজরিওয়াল তার স্থায়ী ভোট ব্যাংকের ওপর আস্থা রাখছেন।
এবার জয়ী হলে টানা চতুর্থবারের মতো দিল্লির দায়িত্বে আম আদমি পার্টি (আপ)। অপরদিকে ২৭ বছর পর বিজেপি তাদের হারিয়ে যাওয়া দিল্লি দখলের সুযোগ খুঁজছে। এ জন্য কেন্দ্রের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে অনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছেন কেজরিওয়াল।
দিল্লিতে ভোট প্রচারের শেষ দিনে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি প্রশ্ন তোলেন কমিশনের স্বাধীনতা নিয়েও। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যেভাবে বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, তাতে মনে হচ্ছে তাদের কোনো অস্তিত্বই নেই। জনগণের প্রশ্ন, মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর রাজীব কুমারজি কোন পদ পেতে চলেছেন? তাকে কী ধরনের পদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে?
মন্তব্য করুন