রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন বেশকিছু ভারতীয় তরুণ। তাদের মধ্যে অনেকে দেশে ফিরে এসেছেন, কেউ কেউ এখনো যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছেন। বলা হচ্ছে, তারা বড় অঙ্কের অর্থের প্রলোভনে পড়ে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে যোগ দিতে গিয়েছিলেন, তবে শাস্তির ভয়ে চাইলেও এখন ফিরতে পারছেন না। কারণ, যুদ্ধ চলাকালে কেউ বাহিনী ছেড়ে পালালে বা চাকরি ছেড়ে দিলে ১৫ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে ডিক্রি জারি করেছেন পুতিন।
তবে যুদ্ধে যোগ দেওয়া এই ভারতীয় তরুণদের কয়েকজন যুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। সর্বশেষ ১৪ জানুয়ারি খবর বের হয়- কেরালার এক যুবক ইউক্রেনের সম্মুখযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এ খবর প্রকাশের পরই তা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
রাশিয়া থেকে ভারতীয় তরুণদের ফিরিয়ে আনতে আগে থেকেই নয়াদিল্লির ওপর চাপ বাড়ছিল। ভারতীয় নাগরিকরা অভিযোগ করছিলেন সরকার তাদের ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালাচ্ছে না। তার মধ্যে সর্বশেষ এ খবর প্রকাশের পরই বিষয়টি নিয়ে উঠেপড়ে লাগে নয়াদিল্লি। শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়েও বিষয়টি উঠে এসেছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার এক ব্রিফিংয়ে জয়সওয়াল বলেন, ‘আজ পর্যন্ত, আমরা রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে ১২৬ ভারতীয়র কাজ করার ব্যাপারে অবগত হয়েছি। তাদের মধ্যে ৯৬ জন ইতোমধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন। তাদের রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ১৮ ভারতীয় এখনো যুদ্ধ করছেন। তাদের মধ্যে ১৬ জনের কোনো খোঁজ নেই বলে জানিয়েছে রাশিয়া। অপরদিকে ১২ ভারতীয় যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিকদের সে দেশে যুদ্ধ করার বিষয়টি রুশ সরকারের কাছে উত্থাপন করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে রুশ দূতাবাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে দ্রুত দেশে ফেরাতে রুশ সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
গেল বছরের জুলাইয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি ওই সময় ভারতীয়দের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। গেল অক্টোবরে কাজানে ব্রিকস সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে পুতিনের সঙ্গে আবারও কথা বলেন মোদি।
পুতিন তখন মোদিকে আশ্বস্ত করেন, যারা ভুলপথে চালিত হয়ে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন এবং যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের মুক্ত করতে তিনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এনডিটিভি জানিয়েছে, একটি মানব পাচার চক্র সামাজিক মাধ্যমে ভারতীয়দের রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার লোভ দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বদলে জোর করে তাদের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়। এরপর তাদের পাঠানো হয় যুদ্ধক্ষেত্রে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্তত চারজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ।
মন্তব্য করুন