ভারতের ছত্তিসগড়ের সাহসী ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক মুকেশ চন্দ্রকরের হত্যাকাণ্ডে শোকাহত গোটা সাংবাদিক সমাজ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে সত্য প্রকাশে অটল থাকা মুকেশকে শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বিজাপুর জেলার একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
রোববার (৫ জানুয়ারি) মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি মুকেশ একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ১২০ কোটি টাকার দুর্নীতির খবর ফাঁস করেছিলেন। তার প্রতিবেদন প্রকাশের পরেই তিনি চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন অনেকের।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, গঙ্গালুর থেকে হিরোলি পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডারের প্রাথমিক খরচ ছিল ৫০ কোটি টাকা, যা অস্বাভাবিকভাবে ১২০ কোটিতে পৌঁছে যায়। মুকেশ এই দুর্নীতির পেছনের মূলহোতাদের চিহ্নিত করে রাজ্য সরকারের নজরে আনেন।
এদিকে মুকেশের তুতোভাই রীতেশ চন্দ্রকরসহ চারজনকে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জানা গেছে, ঘটনার দিন মুকেশ এবং অভিযুক্তরা একসঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন। সেখানেই তর্ক-বিতর্কের জেরে রীতেশ ও অন্যরা মুকেশকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর তার মরদেহ সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে সিমেন্ট দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়। উল্লেখ্য, সাংবাদিক মুকেশ চন্দ্রকর ছিলেন বিজাপুর ও বস্তারের দুর্নীতি ও অপরাধের মুখোশ উন্মোচনে অগ্রগামী। তার নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘বস্তার জংশন’-এর মাধ্যমে তিনি নির্ভীকভাবে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও ঘটনা তুলে ধরতেন। তার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ছিল দেড় লাখের বেশি। মুকেশের নিকটজনরা জানিয়েছেন, তিনি কখনো ভয় পেতেন না এবং সত্য উদঘাটনে সবসময় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
মুকেশের নৃশংস হত্যাকাণ্ড সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়া গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি বিবৃতিতে দেশের সব সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য ভারতের সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
মুকেশ চন্দ্রকর তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সত্যের জন্য লড়াই করেছেন। তার এই আত্মত্যাগ সাংবাদিক সমাজকে অনুপ্রেরণা জোগাবে, একই সঙ্গে তার মৃত্যু দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুরুত্বকে আরও জোরালো করবে।
মন্তব্য করুন