ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বিতর্কিত আম্বেদকর-মন্তব্য ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশটির সংসদ। এ বিতর্কের জেরে লোকসভায় সরকার-বিরোধী দলের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বিজেপির (ভারতীয় জনতা পার্টির) দুই সংসদ সদস্য প্রতাপ চন্দ্র সারাঙ্গী ও মুকেশ রাজপুত। দলটির অভিযোগ, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর আঘাতেই তাদের সংসদ সদস্যরা আহত হয়েছেন। খবর এনডিটিভি।
সংসদবিষয়কমন্ত্রী কিরণ রিজিজু এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাহুল গান্ধী কীভাবে সংসদে শক্তি প্রয়োগ করতে পারেন? কোন আইন তাকে সংসদ সদস্যদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অধিকার দিয়েছে?
রিজিজু আরও দাবি করেন, জাপানিজ মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্টধারী রাহুল কি সংসদ সদস্যদের আঘাত করার জন্যই কারাতে শিখেছেন?
তবে রাহুল গান্ধীর বক্তব্য ভিন্ন। তিনি বলেন, আমি ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু বিজেপির সংসদ সদস্যরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে থামানোর চেষ্টা করেন।
ঘটনার বিবরণ বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) ভারতের লোকসভায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সংঘর্ষের সময় বিজেপির সংসদ সদস্য প্রতাপ সারাঙ্গী মাথায় আঘাত পেয়ে বসে পড়েন। রাহুল গান্ধী কাছে গিয়ে তার শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে বিজেপি সংসদ সদস্যরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
এ সময় বিজেপির নেতা নিশিকান্ত দুবে রাহুলকে কটাক্ষ করে বলেন, আপনার কি লজ্জা নেই? একজন বৃদ্ধ সংসদ সদস্যকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলেন!
ঘটনার পর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপি। পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় এফআইআর করেছেন বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর ও বাঁশুরি স্বরাজ।
অমিত শাহর মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক এর আগে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজ্যসভায় সংবিধানের ৭৫ বছর উদযাপনের সময় অমিত শাহ বলেন, এখন একটা ফ্যাশন হয়েছে, আম্বেদকর, আম্বেদকর...। এতবার ভগবানের নাম নিলে সাত জন্ম পর্যন্ত স্বর্গ লাভ হতো।
শাহর এ মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) থেকেই বিরোধী দলগুলো তাকে আম্বেদকর-অবমাননার অভিযোগে তীব্র সমালোচনা করছে।
অতীত বিতর্ক প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে ওড়িশায় অস্ট্রেলীয় মিশনারি গ্রাহাম স্টুয়ার্ট স্টেইনস ও তার দুই শিশুপুত্রকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনায় বজরং দলের নাম উঠে আসে। সেই সময়ে বজরং দলের রাজ্য সভাপতি ছিলেন বিজেপি সংসদ সদস্য প্রতাপ সারাঙ্গী। যদিও মামলার প্রধান আসামি দারা সিংহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেলেও সারাঙ্গী আদালতে রেহাই পান।
ভারতের সংসদীয় রাজনীতিতে এমন সহিংস ঘটনা নতুন নয়, তবে এই ঘটনা ভারতীয় গণতন্ত্রের পরিবেশ আরও কলুষিত করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করুন