বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই বছর পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য অষ্টম বেঙ্গল ট্রাভেল মার্ট (বিটিএম) থেকে নিজেদের বিরত রাখছে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের প্রতিনিধিরা।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের এই মেলায় অংশগ্রহণ করেছে প্রতিবেশী দেশ নেপাল এবং ভুটান, যা ভারতের পর্যটন শিল্পে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ জানায়, এবারের মেলায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল এবং ভুটান তাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলো তুলে ধরবে। মেলার আয়োজন করছে ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন (ইএইচটিটিওএ) এবং এতে সহযোগিতা করছে ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে মেলার আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান সন্দীপন ঘোষ জানান, ‘বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে, বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন তাদের প্রতিনিধিদের বিটিএমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, এটি মেলার জন্য একটি দুঃখজনক পরিস্থিতি, তবে আমরা আশা করি ভবিষ্যতে পরিস্থিতি শান্ত হলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প পুনরায় অংশগ্রহণ করবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এরই মধ্যে ভারতের পর্যটন শিল্পে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ, সিকিমসহ ভারতের অন্যান্য এলাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের আগমন বন্ধ হয়ে গেছে। এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সিকিমে প্রায় ২৭ হাজার বাংলাদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছিলেন, যা গত বছরের তুলনায় অনেক কম।
ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ২০১৮ সাল থেকে উত্তরবঙ্গে বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়েছিল, কারণ ভারত সরকার তাদের সিকিম ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছিল। তবে এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পরিস্থিতি পরিবর্তনের কারণে পর্যটন খাতটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এমনকি পশ্চিমবঙ্গের অনেক মানুষ, যারা বাংলাদেশে ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন, তারাও তাদের ভ্রমণ বাতিল করেছেন।
এদিকে কোভিড-১৯ মহামারির পর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় থাকা ভারতীয় পর্যটন শিল্প আবারও বড় ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে। এ অবস্থায়, এবারের বেঙ্গল ট্রাভেল মার্টে মূলত ভুটান ও নেপালের পর্যটন শিল্পের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, এবারের মেলায় প্রথমবারের মতো ভুটানের পর্যটন প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন। ভুটান ভারতের উত্তরবঙ্গের সাথে সীমান্ত শেয়ার করে, তাই আমাদের আশা, ভুটান এবং নেপালের সীমান্ত পর্যটনে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়বে।
নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের সিনিয়র ম্যানেজার সূর্য থাপালিয়া জানিয়েছেন, নেপালের পূর্বাঞ্চলের পর্যটন স্থানগুলো এই মেলায় তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে ওই অঞ্চলের মন্দির, ধর্মীয় স্থান এবং হিমালয়ের পটভূমিতে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আমরা মনে করি, বিটিএম এই স্থানগুলো প্রদর্শনের জন্য আদর্শ একটি প্ল্যাটফর্ম হবে, যা ভারতের পর্যটকদের আরও বেশি আকর্ষিত করবে।
মন্তব্য করুন