ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য তথা সেভেন সিস্টার্স ঘিরে মেগা প্রজেক্ট নিয়েছে দেশটির সরকার। সেই প্রজেক্ট বাস্তবায়নে প্রয়োজন অবারিত ইন্টারনেট। অথচ এই রাজ্যগুলো ভারতের একেবার শেষপ্রান্তে অবস্থিত, তাই অবারিত ইন্টারনেটের জন্য বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে নয়াদিল্লি। তবে সম্প্রতি সেভেন সিস্টার্সে ইন্টারনেট ট্রানজিট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি।
২০২১ সালে বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে সেভেন সিস্টার্সে প্রথম ইন্টারনেট সংযোগ চালু হয়। পরিকল্পনা ছিল সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে আসা ক্যাবল বাংলাদেশের ভূপৃষ্ঠের ল্যান্ডিং স্টেশনে আসবে। সেখান থেকে ত্রিপুরা হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দ্বিতীয় আরেকটি সংযোগ দেওয়া হবে। তবে বিটিআরসি সেই পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসায় ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়।
গেল কয়েক বছরে সেভেন সিস্টার্সে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প গড়ে তোলার জন্য ভারত সরকার নানা প্রকল্প নিয়েছে। প্রতিটি রাজ্যে গড়ে তোলা হয়েছে সফটওয়্যার পার্ক। এছাড়া ড্রোন তৈরির শিল্প, সফটওয়্যার নির্মাণের মতো নতুন শিল্পকেন্দ্রও গড়ে উঠছে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ইন্টারনেট নেওয়া গেলে ত্রিপুরা, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মিজোরাম, মনিপুর, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে দ্রুতগতির ইন্টারনেট আরও ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হতো।
তবে ভারতীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ যদি সত্যিই বাড়তি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের প্রস্তাবিত সংযোগটি না দেয় তাহলেও উত্তর-পূর্ব ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে বিশেষ প্রভাব পড়বে না। ব্যান্ডউইথের চাহিদা বাড়লে তা সামাল দেওয়ার জন্য নিজস্ব পরিকল্পনা অনেক বছর আগে থেকেই করা আছে। তাদের ভাষায়, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রস্তাবিত ব্রডব্যান্ড সংযোগটি ছিল একটি বিকল্প মাত্র।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, গেল এক দশকে রাস্তাঘাটসহ নানা পরিকাঠামোর যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। টাটা গোষ্ঠীর বিনিয়োগ এবং অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্পগুলো সেখানে বড়সড় বিনিয়োগ করছে। এখন সেখানে ব্যান্ডউইথের সমস্যাও নেই। তবে অদূর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এই ইন্টারনেট আনা হচ্ছিল বলে জানান তারা।
বিবিসি বাংলাকে বিশ্লেষক প্রতিম রঞ্জন বসু জানান, ইতোমধ্যে চালু সংযোগগুলো তো আছেই, এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের দিঘাতে যে ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন তৈরি হচ্ছে সেখান থেকেও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যাবে। আর পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর-পূর্ব ভারত তো একেবারেই কাছে! তাই কোনো কারণে বাংলাদেশ থেকে সংযোগ না পাওয়া গেলেও উত্তর-পূর্ব ভারত কোনো সমস্যায় পড়বে না।
মন্তব্য করুন