ভারতের আদানি পাওয়ারসহ অন্যান্য বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পাওনা মেটাতে শেখ হাসিনা সরকারকে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল দিল্লি। এ ব্যাপারে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনাও শুরু হয়েছিল। তবে আকস্মিকভাবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ আলোচনা থেমে যায় এবং ভারত আর অগ্রসর হয়নি।
রোববার (১০ নভেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ ঋণের ব্যাপারে নতুন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু জানায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের বিগত সরকার ভারতীয় কোম্পানি, প্রাথমিকভাবে আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া মেটাতে ভারত সরকারের সঙ্গে ঋণ নিয়ে আলোচনা করছিল। এই ঋণ চুক্তির জন্য প্রায় ২ শতাংশের সুদ ভর্তুকিও ঠিক করা হয়েছিল। তবে হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর এই আলোচনা ভেস্তে যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়ার পর গত ৮ আগস্ট নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট ডলার সংকটের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই বিদ্যুতের বকেয়াসহ আমদানির ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। আদানি পাওয়ার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্য ঝাড়খন্ডে একটি ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে- উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাওনা ৮০০ মিলিয়ন ডলার আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যেই চলতি মাসে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ হ্রাস করেছে তারা। এছাড়া আদানি গ্রুপ ৭ নভেম্বরের মধ্যে পাওনা পরিশোধ না করা হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার যে আলটিমেটাম দিয়েছিল, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পাওনা আদায়ের আলোচনার প্রেক্ষিতে, সেই আলটিমেটাম তারা তুলে নিয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আদানি পাওয়ার ছাড়াও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী আরও ৪টি ভারতীয় কোম্পানিরও পাওনা বকেয়া পড়েছে বাংলাদেশের কাছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এসইআইএল এনার্জি, এনটিপিসি, পিটিসি এবং পাওয়ার গ্রিড। যদিও এসব কোম্পানির মধ্যে আদানি গ্রুপের পাওনাই সবচেয়ে বেশি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারত থেকে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ বাংলাদেশের বকেয়া পরিশোধে খুবই সহায়তা করত। তবে এক দিক দিয়ে বিষয়টি ভারত সরকারের জন্য ভালো হয়েছে। কারণ শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ায় এই অর্থ পাওয়া আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যেত।
শেখ হাসিনা ভারত থেকে ঋণ এনে ভারতীয় কোম্পানির বকেয়া পরিশোধের চেষ্টা চালালেও; ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরনের কোনো উদ্যোগ বা এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
মন্তব্য করুন