ভারতের বিরাট এলাকার দখল নিয়েছে চীনের সামরিক বাহিনী। এ নিয়ে চরম অস্বস্তিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। তবে এখনও দিল্লি পাল্টা কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিরোধী দল কংগ্রেস ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, লাদাখে দিল্লির সমপরিমাণ ভূমি দখলে নিয়েছে চীন। ওই অঞ্চলে ভারত ভূখণ্ডের চার হাজার বর্গকিলোমিটারে চীনা সেনা অবস্থান করছে। এ ছাড়া সেভেন সিস্টার্স খ্যাত অরুণাচল প্রদেশে চীনা সেনা প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। অঞ্চলটির অন্তত ৬০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে চীনের সেনারা। শুধু তাই নয় সেখানে নিজেদের ঘাঁটিও গেড়েছে জিনিপিং বাহিনী।
দ্য হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, লাদাখের ভূমি দখলের অভিযোগটি করেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনকে ভালোভাবে সামলাতে পারছেন না। এ সুযোগে লাদাখে দিল্লির সমপরিমাণ ভূমি দখলে নিয়েছে চীন।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে দেওয়া ব্ক্তব্যে রাহুল গান্ধী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আপনি যদি চীনকে ভালোভাবে মোকাবিলা করার কথা বলেন এবং সে সঙ্গে আমাদের ভূখণ্ডের চার হাজার বর্গকিলোমিটারে চীনা সেনা থাকে; তাহলে হয়তো আমরা চীনা সেনাদের দখলে নিয়েছি। তারা লাদাখে দিল্লির আয়তনের সমপরিমাণ ভূমিতে অবস্থান করছে। আমি মনে করি, এটি একটি বিপর্যয়।
রাহুল গান্ধী আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশের সেনা যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডের চার হাজার বর্গকিলোমিটার দখল করলে আমেরিকা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে? কোনো প্রেসিডেন্ট কী এই বলে পার পেয়ে যাবেন, তিনি ভালোভাবে পরিচালনা করেছেন? তাই আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী মোদি চীন পরিস্থিতি মোটেও ভালোভাবে সামাল দিতে পারছেন না। কারণ, চীনা সেনাদের আমাদের ভূখণ্ডে বসে থাকার কোনো কারণ নেই।
গত বছর একই রকম অভিযোগ করেছিলেন রাহুল। তখন কংগ্রেস নেতা অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীকে লাদাখে ভারত-চীন সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের কাছে মিথ্যা বলছেন। কারণ, প্রকৃত সত্য হচ্ছে- চীন ভারতের ভূখণ্ড কেড়ে নিয়েছে।
অপরদিকে অরুণাচলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম অরুণাচল-২৪ ও নিউজিফাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি তথা পিএলএ সেনারা অরুণাচলের অন্তত ৬০ কিলোমিটার ভেতরে অনুপ্রবেশ করেছে। এ সময় তারা আনজাও জেলার কাপাপুতে একটি ক্যাম্পও স্থাপন করে। সেখানে কাঠে আগুন ধরানো, পাথরের গায়ে রঙ ব্যবহার করে লেখা চীনের নাম এবং চীনা খাদ্যসামগ্রীর ছবি দেখে বোঝা যায় আনুমানিক এক সপ্তাহ আগে চীনা সেনারা সেখানে ঘাট স্থাপন করেছিল।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, চীনা সেনারা প্রবেশের পর পাথরের গায়ে চলতি বছরের চিহ্ন এঁকে দেয়। যা সাধারণত ভারতের কোনো অঞ্চল দখলের পর তা নিজেদের দাবি করার কৌশল হিসেবে করা হয়ে থাকে। খবরে বলা হয়, দুই দেশকে বিভক্তকারী ম্যাকমোহন লাইনের হাদিগ্রা পাসের কাছে কাপাপুতে ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশের একটি ক্যাম্প রয়েছে। আর আনজাও জেলার নিকটতম প্রশাসনিক এলাকা চাগলাগাম ম্যাকমোহন লাইন থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ ছাড়া চাগলাগাম থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে পার্বত্য এলাকায় গ্লাইতাকরু পাসের অবস্থান।
প্রসঙ্গত, লাদাখ ভারতের একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল। এই অঞ্চলের উত্তরে কুনলুন পর্বতশ্রেণি এবং দক্ষিণে হিমালয় দ্বারা বেষ্টিত। ১৯৪৭ সাল থেকে এই অঞ্চলটি ভারত, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে বিরোধের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অপরদিকে চীনের তিব্বতের সাথে অরুণাচল প্রদেশের ১১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে। প্রদেশটি উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। এর দক্ষিণে ভারতের অঙ্গরাজ্য আসাম, পশ্চিমে ভুটান, উত্তর ও উত্তর-পূর্বে চীন ও পূর্বে মিয়ানমার।
১৯১৩ সাল থেকেই উত্তরে তিব্বতের সীমান্ত নিয়ে বিবাদ রয়েছে। ১৯৪৭ সালে চীন প্রায় সম্পূর্ণ অরুণাচল প্রদেশের ওপর কর্তৃত্ব দাবি করে। ১৯৫৯ ও ১৯৬২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে চীনা সেনারা বেশ কয়েকবার ম্যাকমাহন রেখা অতিক্রম করে এবং সাময়িকভাবে ভারতের সীমান্ত ঘাঁটিগুলো দখল করে। ১৯৬২ সালে চীন অরুণাচল প্রদেশ থেকে সরে যায়। এরপর বহুবার সীমান্ত বিবাদটি সমাধানের চেষ্টা করা হলেও এখনও কোনো সমঝোতা হয়নি।
মন্তব্য করুন