ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আরজি কর হাসপাতালে শিক্ষানবিস চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার জেরে শুরু হওয়া বিক্ষোভ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। এ ইস্যুতে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজে’র ডাকে মঙ্গলবারের (২৭ আগস্ট) নবান্ন অভিযানে পুলিশ-আন্দোলনকারী সংঘর্ষ হয়। প্রতিবাদে আজ বুধবার (২৮ আগস্ট) বিজেপি রাজ্যে ১২ ঘণ্টা ধর্মঘট পালন করছে।
সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ‘বাংলা বন্ধ্’ নামে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সকাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এর প্রভাব পড়েছে। ট্রেন, বাস চলছে না অনেক জায়গায়। এতে অফিসগামী ও সাধারণ যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিজেপির নেতা-কর্মীরা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে ‘বাংলা বন্ধ্’ কর্মসূচি পালন করছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কোথাও কোথাও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ, গুলির ঘটনা ঘটেছে।
হাওড়া পঞ্চানন তলায় বিজেপি কর্মীরা অবরোধের সমর্থনে জড়ো হন। তারা সেখানকার দোকান জোর করে বন্ধের চেষ্টা করেন। এ সময় তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা বাধা দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিজেপির কর্মীরা সড়ক অবরোধ করেন। তীব্র উত্তেজনা ও হাতাহাতি চলাকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ১৫ জন বিজেপি কর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়।
পুরাতন মালদহে অবরোধ সমর্থনকারীরা জড়ো হলে পুলিশের সামনেই তৃণমূলের কর্মীরা তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তেমনি লেবুতলা পার্কে দোকান খুলতে গেলে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বিজেপির হাতাহাতি হয়। এ ছাড়া রানিগঞ্জ, আসানসোলের জামুরিয়ায়, দুর্গাপুর বেনাচিতি বাজার, বারুইপুর স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, হাতাহাতি, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে সকালে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় বন্ধের সমর্থনে বিজেপি মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে রাস্তাতেই শুয়ে পড়েন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। তাদের সরাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়।
ভাটপাড়ায় গুলির ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য তৃণমূলকে দুষছেন বিজেপি নেতারা। ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সংসদ সদস্য বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ বলেন, তৃণমূল বোমা-গুলি চালিয়েছে। এতে রবি সিংহ নামে আমাদের দলের এক কর্মী আহত হয়েছেন। তারা আমার বাড়ি আসছিলেন। ঘোষপাড়া মোড়ের কাছে গাড়ি আটকানো হয়। তারপর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতকারীরা।
এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে কোনো বাধা ছাড়াই সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রেখেছেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন স্থানে এর প্রতিবাদে মিছিল করছে তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার মমতার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন দিক থেকে রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্ন’ অভিমুখে যাত্রা করলে পুলিশ প্রতিবন্ধকতা বসিয়ে তাদের আটকে দেয়। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেলও ব্যবহার করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশও লাঠিপেটা করে। এসব ঘটনা ‘পুলিশি সন্ত্রাস’ বলে অভিহিত করে বিজেপি।
মন্তব্য করুন