কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার এ মন্তব্যের প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মমতাকে কড়া বার্তা দিয়েছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে সেই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই কেন্দ্রীয় সরকারকে পাল্টা জবাব দিয়েছেন মমতা।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবিপি লাইভের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিষয়ে গভীরভাবে অবহিত। আমি সাতবারের সংসদ সদস্য এবং দুবারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছি। অন্যদের চেয়ে আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি ভালো জানি। আমাকে আমাকে পররাষ্ট্রনীতি শেখাতে হবে না।’
কী বলেছিলেন মমতা
এর আগে গত রোববার (২১ জুলাই) ভারতের ধর্মতলায় এক সভায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে মমতা বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে কেউ পশ্চিমবঙ্গের দরজায় এলে তিনি ফেরাবেন না। এ বিষয়ে জাতিসংঘের একটি সনদের কথাও উল্লেখ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারবেন না। কারণ বাংলাদেশ একটি স্বতন্ত্র দেশ। এ নিয়ে কিছু বলার থাকলে ভারত সরকারই বলবে।
মমতার বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশের জবাব
মমতার এ বক্তব্যের পর বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দেয়। এতে মন্ত্রণালয় জানায়, তার এ ধরনের মন্তব্যে বিভ্রান্তি বাড়বে। এ মন্তব্যের বিষয়ে আপত্তিও জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার মন্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তার প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে বলতে চাই, তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার, ঘনিষ্ট ও উষ্ণ। কিন্তু তার (মমতা) এই বক্তব্যে বিভ্রান্তির সুযোগ রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে ভারত সরকারকে নোট পাঠিয়েছি।’
পরে ওইদিনই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর করা মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আমরা একটি কূটনৈতিক নোট পেয়েছি। আপনারা রিপোর্টে যেমনটা দেখেছেন, খানিকটা সে রকমই।
তিনি বলেন, ভারতের সংবিধানের সপ্তম তপশিলের প্রথম তালিকার ১০ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বিদেশসংক্রান্ত সমস্ত বিষয় এবং অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত বিষয়ের এখতিয়ার একমাত্র ভারত সরকারের।
মমতাকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কড়া বার্তা
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আপত্তির পরদিন শুক্রবার (২৬ জুলাই) মমতাকে কড়া বার্তা দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণবীর জওসওয়াল বলেন, অন্য কোনো দেশ বা বৈদেশিক বিষয় নিয়ে পদক্ষেপ করার অধিকার কোনো রাজ্য সরকারের নেই।
মমতাকেও কার্যত সংবিধানের উদ্ধৃত দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সংবিধান বৈদেশিক বিষয় নিয়ে কথা বলার অধিকার রাজ্যকে দেয়নি। বিষয়টি একান্তভাবে ভারত সরকারের হাতে। তাই আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে কোনো রাজ্যের নাক গলানোর প্রয়োজন নেই।