ভারতে কিছুদিন পরপরই উত্থান ঘটে ধর্মগুরুর। যাদের অধিকাংশই পরবর্তীতে ভণ্ড বলে প্রমাণিত হন। সম্প্রতি দেশটিতে আলোচনায় এসেছেন নতুন এক ধর্মগুরু, যিনি ভোলে বাবা নামে পরিচত। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার অতো পরিচিতি না থাকলেও তার ভক্তসংখ্যা কয়েক লাখ। মঙ্গলবার ভারতের উত্তরপ্রদেশে ভোলে বাবার আস্তানায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে অন্তত ১১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারানো এসব মানুষ গিয়েছিলেন সৎসঙ্গ নামক একটি অনুষ্ঠানে।
সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে বাবার আস্তানায় যে ধর্মীয় জমায়েত, সেগুলোকে ‘সৎসঙ্গ’ বলা হয়ে থাকে। আয়োজকরা ৮০ হাজার মানুষের জমায়েতের জন্য মঙ্গলবার অনুমতি নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এর কয়েক গুণ বেশি মানুষ মঙ্গলবার জড়ো হয়েছিলেন ‘ভোলে বাবা’ নামে পরিচিত ওই স্বঘোষিত ধর্ম প্রচারকের সভায়। পুলিশ জানিয়েছে, এই ভোলে বাবা নারায়ণ সরকার হরি নামেও পরিচিত।
বহুল আলোচিত এই ‘ভোলে বাবা’ অতীত জীবনে পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি করতেন। এরপর ইভটিজিংয়ের দায়ে সেই চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। জেলও হয় তার। জেল খেটে বেরিয়ে কীভাবে একজন পুলিশ কনস্টেবল ধর্মগুরু হয়ে উঠলেন, সেটিও যেন এক সিনেমার গল্প। মঙ্গলবারের ঘটনার পর ওই স্বঘোষিত ধর্ম প্রচারকের খোঁজে তার কয়েকটি আশ্রমে তল্লাশি শুরু করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। তবে অভিযোগ রয়েছে, বুধবার যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, সেখানে ওই ধর্ম প্রচারকের নাম নেই।
উত্তর প্রদেশ পুলিশের সূত্র অনুযায়ী, ‘ভোলে বাবা’ নামে পরিচিত নারায়ণ সরকার হরির আসল নাম সুরজ পাল জাটভ। কাসগঞ্জ জেলার বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা জাটভ উত্তর প্রদেশ পুলিশের কনস্টেবল ছিলেন। চাকরি জীবনের গোড়ার দিকে বেশ কয়েক বছর পুলিশের স্থানীয় গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত ছিলেন তিনি। কাজ করেছেন প্রায় ১৮টি থানা এলাকায়। প্রায় ২৮ বছর আগে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ দায়ের হয় তার বিরুদ্ধে। প্রথমে সাসপেন্ড করা হয়েছিল জাটভকে, পরে বরখাস্ত হন তিনি।
ইটাওয়া জেলার সিনিয়র পুলিশ সুপার সঞ্জয় কুমার জানান, ওই ইভটিজিংয়ের ঘটনায় বেশ লম্বা সময় জেলে ছিলেন সুরজ পাল জাটভ। কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে ‘বাবা’র রূপ ধরেন তিনি। বরখাস্ত হওয়ার পরে সুরজপাল জাটভ আদালতে গিয়েছিলেন নিজের চাকরি ফিরে পেতে। আদালত চাকরি ফিরিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু ২০০২ সালে আগ্রা জেলায় কর্মরত অবস্থায় স্বেচ্ছায় অবসর নেন জাটভ। এরপর তিনি ফিরে গিয়েছিলেন নিজের গ্রামের বাড়িতে। কিছুদিন পরে তিনি দাবি করতে থাকেন যে সরাসরি ঈশ্বরের সঙ্গে কথা হয় তার। এই সময় থেকেই নিজেকে ‘ভোলে বাবা’ হিসেবে তুলে ধরতে থাকেন জাটভ।
মন্তব্য করুন