ওসামনীয় সাম্রাজ্যের অধীনে একটা সময় অর্ধেক পৃথিবী শাসন করতো তুর্কি মুসলিমরা। ১৮৫৩ সালে সেই ওসমানীয়দের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধে লিপ্ত হয় রাশিয়া।
কিন্তু তুর্কিদের রণকৌশলের কাছে শেষ পর্যন্ত হেরে যায় জার শাসিত রাশিয়া। ওই যুদ্ধে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স তুরস্কের সাথে জোট বেঁধে রুশ আগ্রাসন প্রতিহত করে।
যুদ্ধের কারণে বড় রকমের মার খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে রাশিয়ার অর্থনীতি। সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে বাংলাদেশের আয়তেনের চেয়ে ১২ গুণ বড় আলাস্কা অঙ্গরাজ্যটি পানির দরে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছিল রাশিয়া।
যদিও অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, আলাস্কা বিক্রির ঘটনা সরাসরি ক্রিমিয়া যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত নয়। তবে, কিছু পরোক্ষ সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন তারা।
অর্থনৈতিক চাপ
ক্রিমিয়া যুদ্ধ রাশিয়ার অর্থনীতিতে একটি বড় চাপ সৃষ্টি করেছিল। যুদ্ধের ব্যয় এবং পরবর্তী পুনর্গঠনের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল।
আলাস্কা রক্ষা করার অসুবিধা
আলাস্কা রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে ছিল এবং রাশিয়া এই বিশাল ও বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের রক্ষা ও পরিচালনা করা কঠিন মনে করেছিল, বিশেষ করে ব্রিটিশ ও ফরাসীদের আগ্রাসনের সম্ভাবনার মুখে।
অপ্রচলিত সম্পদ
সেই সময়ে আলাস্কা তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়নি। কারণ, এর প্রাকৃতিক সম্পদগুলো তখনও আবিষ্কৃত হয়নি এবং বাণিজ্যিকভাবে অঙ্গরাজ্যটি তখন উন্নত ছিল না।
রাজনৈতিক কৌশল
রাশিয়া চেয়েছিল যে- আলাস্কা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকলে এটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতি একটি শক্তিশালী বাধা তৈরি করবে। সেই সময় রাশিয়া এবং ব্রিটেনের মধ্যে বৈরিতা ছিল। রাশিয়া চাইছিল না যে আলাস্কা ব্রিটিশদের হাতে পড়ুক।
এই সব কারণে ৩০ মার্চ ১৮৬৭ সালে, আলাস্কাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৭.২ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেয় রাশিয়া। কিন্তু পরে এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি অত্যন্ত লাভজনক সিদ্ধান্ত প্রমাণিত হয়। কারণ আলাস্কা বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন তেল, স্বর্ণ এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থের জন্য পরিচিত হয়ে ওঠে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে আলাস্কার মোট জিডিপির পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার ৮০ শতাংশই এসেছিল প্রেট্রোলিয়াম খাত থেকে। এই আলস্কার বিশ্বের জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম।
১৯৭৮ সালে আলাস্কার সমুদ্রের তলদেশে প্রায় এক হাজার কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সন্ধান পাওয়া যায়। গেল চার দশকের বেশি সময় ধরে উত্তোলনের পরেও সেখানে আরও প্রায় ৪০০ কোটি ব্যারেল জ্বালানি তেলের মজুত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ভূতাত্বিক জরিপ সংস্থার- ইউএসজিএসের তথ্য মতে, আলাস্কার উত্তর উপকূলেই ৮৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাসের খনি রয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মন্তব্য করুন